মুখ দিয়ে ছবি এঁকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নওগাঁর মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দার উপজেলার চককেশব বালুবাজার গ্রামের এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। জন্মগত ভাবে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধি না হলেও একটি দূর্ঘটনায় এখন তিনি প্রতিবন্ধি। দুই হাত নেই, পা থাকলেও অবশ। তবে মুখ দিয়ে ভাল ছবি আঁকতে পারেন। এখন তিনি মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

হুইল চেয়ারে সাথে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকেন। তবে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার।

এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। কাজ করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। গত ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে যান। এরপর দুই হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। দুই পা থাকলেও অবশ। দূর্ঘটনার পর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় চিকিৎসার খরচ পল্লীবিদ্যুৎ বহন করে। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব নেয়া হয়নি। দূর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ আট বছর।

সমাজের অবহেলার পাত্র না হয়ে সিআরপিতে থাকা অবস্থায় নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখেছেন। মুখ দিয়ে গ্রাম, বাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকেন। এসব ছবি এঁকে তা বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে গত চার বছর থেকে গ্রামের বাড়ি চককেশব বালুবাজারে বৃদ্ধা মায়ের সাথে বসবাস করছেন।

এখন হুইল চেয়ারে বসে দিনে অধিকাংশ সময় কাটে। হাত না থাকলেও মুখ দিয়ে ছবি আঁকতে পারেন। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন।

মুখে তুলি। ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার রং নিচ্ছেন আর ছবি আঁকছেন। হুইল চেয়ারের সাথে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছেন তিনি। মুখ দিয়ে তিনি ছবি আঁকায় মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম নামে পরিচিতি।

প্রতিভাবান এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম বিটিসি নিউজকে বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরত। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। এক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা ছবি আঁকতে পারতাম। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেন্সিল ও রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন। বর্তমানে বেশিক্ষন ছবি আঁকতে পারিনা। একটানা ছবি আঁকলে গায়ে জ্বর আসে।

শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নেই। তাই তিনি যদি সুযোগ পান প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান।

তিনি বেশ গর্ব নিয়ে বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় আমার আঁকা ছবি দিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শনী হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ছিল। তাদের সাথে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। ছবির দাম নিয়ে দেন দরবার তেমন একটা করা হয় না।

বেশির ভাগ সময়ই একেকজন খুশি হয়ে যা দেন, তাই নেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি তার কাছ থেকে ২০টি ছবি নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বর্তমানে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার।

মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান বিটিসি নিউজকে বলেন, মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা ভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে  বিকশিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি বড় পর্যায়ে কখনো তার প্রতিভাকে দেখানোর সুযোগ পেত তাহলেও অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারত ইব্রাহিম।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.