মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ডাকাতি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাণভয়ে বাড়িছাড়া মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, থানা পুলিশের প্রতারণা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লা দিয়াড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।

ডাকাতরা মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমানসহ পরিবারের নারী-পুরুষ সকলকে শারিরিক নির্যাতন করে বেঁধে রেখে বাড়ির নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ ৪ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

বর্তমানে প্রানভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পাশের গ্রামে শ্যালকের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ২ দিন পরে মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমানের বাড়িতে পুনরায় ডাকাতি করতে আসলে এলাকার মানুষ একই এলাকার মৃত হাসেন আলী মন্ডলের ছেলে ডাকাত মুনিরুলকে ধরে এবং শিবগঞ্জ থানা পুলিশে সোপর্দ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান নিজে এঘটনায় মামলা করতে চাইলেও শিবগঞ্জ থানা পুলিশ মামলার করার কথা বলে সহজ সরল এই মুক্তিযোদ্ধার সাথে প্রতারনা করে এবং অন্য একটি মামলার কপি দিয়ে বোকা বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এর কাছে বার বার ঘুরলেও কোন পাত্তা দেয়া হয়নি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বলে অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান। বর্তমানে ওই ডাকাতরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে।

এনিয়ে আরও বেশী আতংকিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমানের পরিবার। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভের সাথে একদিকে ডাকাতের অত্যাচার এবং থানা পুলিশের প্রতারণার সঠিক বিচার দাবী করেছে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কয়লা দিয়াড় গ্রামের মৃত উনসাহাক আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমানের (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর-চাঁ. নবাবগঞ্জ ৩০/২০০২/৫৬৮), মুক্তিযোদ্ধা সিরিয়ার নম্বর-ম-৬১৬৫৫) লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর/২০ দিবাগত গভীর রাতে ৮/১০ জনের একটি ডাকাত দল বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমানের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমানকে খুঁটির সাথে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে এবং নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল বের করে দিতে বলে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেই মারধরের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় ডাকাতদল। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সামনেই তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী, ছেলে আবু তাহের ও তাহেরের স্ত্রীকে অমানবিকভাবে মারধর করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। প্রাণভয়ে বাড়িতে থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার যেখানে আছে তা বলতে বাধ্য হয়।

ডাকতাদল বাড়ির বাক্স, সোকেস, আলমারী ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমান ও তাঁর ছেলেদের ঘর থেকে নগদ টাকা, প্রায় ২ ভরি স্বর্ণসহ বিভিন্ন মালামালসহ প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।

গ্রামের পার্শ্ববর্তী ফাঁকা স্থানে বাড়ি হওয়ায় এর ২দিন পর আবারও ডাকাতদল মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি করতে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে থাকা ১০টি গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

বিষয়টি টের পেয়ে গ্রামবাসীরা তাৎক্ষনিক বেরিয়ে আসে এবং ডাকাতদলকে ঘিরে ফেলে। এরই মধ্যে ডাকাতদলের অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও একই গ্রামের মৃত হাসেম আলীর ছেলে মনিরুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

পরে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রামবাসী ডাকাত মনিরুলকে সোপর্দ করে। ডাকাত মনিরুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকা আরও ৩জন ডাকাতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে থানা পুলিশ।

আটককৃতরাও ডাকাতির সাথে জড়িতদের নাম পুলিশের কাছে প্রকাশ করে। এঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ সেই অভিযোগের কোন অনুলিপি দেয় নি।

অভিযোগ করার পর দিনের পর দিন থানায় ঘোরাঘুরি করলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে মামলার কপি চাইলে থানা পুলিশ, শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামসুল আলম শাহ্ ও ওসি (তদন্ত) মো. শাহিন রেজা এবং তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার পারভেজ স্বাক্ষরিত অন্য এলাকার একটি ভিন্ন মামলার ১ সেপ্টেম্বর ঘটনার মামলার কপি দিয়ে থানা থেকে পাঠিয়ে দেয়। অদ্যবধি এ ঘটনার কোন ব্যবস্থা বা প্রতিকার পায়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। এঘটনায় এলাকার মানুষ আতংকিত ও হতাশাগ্রস্থ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে নিশ্চিন্তে রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারবোনা এটা কোনদিন ভাবিনি। আমাকে খুঁটির সাথে বেঁধে অমানবিকভাবে বেধড়ক মারধর করে এবং আমার সামনে ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ির আসবাপত্র ভাংচুর এবং প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেল, গরু চুরি করতে এসে গ্রামবাসীর হাতে ডাকাত ধরা পড়লো, ডাকাতির সাথে জড়িতদের কথা শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জানতে পারলো। তারপরও ডাকাতদলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হলো না।

ডাকাতদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে কোন অজ্ঞাত কারনে আমার সাথে প্রতারনা করেছে শিবগঞ্জ থানার ওসি। ডাকাতির ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমিই বড় অপরাধী। আমাকে থানায় বসতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমি প্রাণভয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে অন্যের (শ্যালক) বাড়িতে বাস করছি।

বার বার ওসি মো. শামসুল আলম শাহ্ কে বললে তিনি বিরক্ত হয়ে আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনও করেছেন।

শেষ পর্যন্ত কোনই প্রতিকার হয়নি আমার বাড়িতে ডাকাতি এবং পরিবারের লোকজনদের মারধর করে মালামাল লুটপাটের ঘটনার। উল্টোদিকে, কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পার ডাকাত মনিরুল ও অন্যান্যরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকটায় আতংকে দিন কাটাচ্ছি।

থানা পুলিশের এমন প্রতারণা ও আচরণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান বলেন, এজন্যই কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মাটি ও মানুষকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? দেশ স্বাধিন করে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যদের কাছ থেকে এই পুরস্কার পেলাম। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কথা বলতে পারছিলেন না।

এ ব্যাপারে বিটিসি নিউজ এর পক্ষে থেকে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামসুল আলম শাহ্ এর সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমান এর বাড়িতে ডাকাতিসহ পরবর্তী ঘটনার বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেন। কিন্তু পরে আর তিনি ফোন করেন নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. মোকলেসুর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি, ডাকাত মনিরুলকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা, মনিরুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এই ডাকাতির সাথে জড়িতদের তথ্য জানার পরও কোন অজ্ঞাত কারণে এই ঘটনার কোন ব্যবস্থা না নিয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অপমান-অপদস্ত করার বিষয়টির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা করছেন এলাকার মানুষ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.