প্রেস বিজ্ঞপ্তি: মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর বড় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ উদ্বোধন এবং মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৭৫’র পরবর্তী সময়ে এ দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন করার জন্য যে আত্মত্যাগ, আন্দোলন ও সংগ্রাম করা হয়েছিল দেশের নতুন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস সম্পর্কে জানতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে। দেশের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর বড় ভূমিকা রাখবে।
মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ পুলিশ সদস্যকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সারা দেশ যখন কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেই মুহুর্তে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আক্রমণ করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী। আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য তখন শহিদ হন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করতে করতে আত্মহুতি দিয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে আমরা এ দেশ পেয়েছি।
সকল যুদ্ধে পুলিশের অবদান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ শুধু যুদ্ধে না সেবাক্ষেত্রেও অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছে। করোনার সময় যখন ছেলে বাবাকে, মেয়ে মাকে- অর্থাৎ আপনজন আপনজনকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। করোনায় মৃত ব্যাক্তির লাশ দাফন হচ্ছিল না, পুলিশ গিয়ে দাফন করেছে। ঘরে ঘরে খাদ্যসহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পৌঁছাতে তৎপর ভূমিকা রেখেছে।
এসময় মাদকের ভয়াবহতা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো মূল্যে নতুন প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে দেশের ভবিষ্যত স্বপ্ন বিনষ্ট হবে। প্রশাসন, পুলিশ, আর্মি, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকলের সহযোগিতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব। এজন্য প্রত্যেকের উচিত ছেলে-মেয়েদের প্রতি খেয়াল রাখা। ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে- এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। যারা মাদকব্যবসা ও মাদকসেবনের সঙ্গে জড়িত তাদের সম্পর্কে জানামাত্র তিনি প্রশাসনকে খবর দেয়ার পরামর্শ দেন।
এর আগে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ উদ্বোধন, আরএমপি প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী পুলিশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও শহিদ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করেন। রাজশাহী পুলিশ লাইন্স প্রতিরোধ যুদ্ধে ১২ জন শহিদ পুলিশ পরিবারের সদস্য ও ৫ জন বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আখতার হোসেন বক্তব্য রাখেন। বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, এনডিসি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো: আব্দুল বাতেন, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও বেগম আখতার জাহান, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শহিদ পুলিশ পরিবারের সদস্যগণ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজশাহী সার্কিট হাউজে বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সভায় রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ অংশগ্রহণ করেন। বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, এনডিসি সভার শুরুতে ৮ জেলার গত জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সার্বিক চিত্র পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
তিনি জেলাগুলোতে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের সংখ্যা, চোরাচালান প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বাহিনির পরিচালিত অভিযান, অবৈধ হাট-বাজার, দোকান-পাট ও উচ্ছেদকৃত স্থাপনার হালনাগাদ চিত্র এবং যৌন হয়রানি ও ইভটিজিং সংক্রান্ত অপরাধচিত্র তুলে ধরেন। সভায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ স্ব-স্ব জেলার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংঘটিত অপরাধ ও কারাগারগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। ওই সভায় বিভিন্ন জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ মাদকসংক্রান্ত অপরাধের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় মাদককে একটি সামাজিক সমস্যা উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদক একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমের এর মোকাবিলা করতে হবে। মসজিদের ইমাম, শিক্ষক-ছাত্র, পুরোহিত, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সমাজের সম্মানীয় ব্যাক্তিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এ অপরাধমূলক কাজের হারটা কমবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, সমাজ যদি এগিয়ে না আসে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমাদের ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোনেরা কে কোথায় কী করছে তা যদি না দেখি তা হলে আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের যে করেই হোক এ সমস্যা থেকে বের হতে হবে। এ সময় তিনি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনিকে আহ্বান জানান। তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তি যে দলের-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী আসন্ন পূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গুজব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। যে গুজব ছড়াবে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আসন্ন পূজায় প্রত্যেক মÐপে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করতে ও স্বেচ্ছাসেবক রাখার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভূখন্ডে কোনো উগ্রপন্থি থাকতে দেব না।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.