মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি-আগুন, নিহত-১

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। পরে উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতাল থেকে এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১২ বছরের এক শিশুসহ আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে বিকাল পর্যন্ত গুলি অব্যাহত ছিলো। পাশাপাশি শেষ বিকেলে এই রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
অপরদিকে, সীমান্তের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, গোলাগুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নিহত দুজনের ছবি গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে। তাদের গায়ে আরএসও নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের পোশাক রয়েছে। এছাড়াও বিকেলে জিরো পয়েন্টের অসংখ্য বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। গোলাগুলিতে লিপ্ত পক্ষগুলো একটি অপরকে ঘায়েল করতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সময়ে শতাধিক ঘর পুড়ে যায়।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, হামিদুল্লাহ (২৭) ও মহিবুল্লাহ (২৫) নামের গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তিকে উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক হামিদুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন। মহিবুল্লাহকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত রোহিঙ্গার লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুইজন চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, হতাহত রোহিঙ্গাদের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আনা হয়েছে। সেখানে কি হয়েছে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সকাল থেকে গুলি বিনিময় শুরু হয়। তারা কোনারপাড়া শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিকেল চারটার দিকে শিবিরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে কারা আগুন দিয়েছে এখনো সঠিক বলতে পারছি না।
এ ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাও মারা যেতে পারে জানিয়ে দিল মোহাম্মদ বলেন, কতজন হতাহত হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সকালে নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। কারা গোলাগুলি করেছে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
তুমব্রুর স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যাল্ডের কোনার পাড়া ক্যাম্পে এবং মিয়ানমার সীমান্তের ওপার হতে বুধবার ভোর থেকে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ আসছিল।
আজিজ নামে সীমান্তে বসবাসকারী এক ব্যক্তি জানান, বিকেলের পর সীমান্তের শূন্য রেখায় বাস করা রোহিঙ্গা বসতির মিয়ানমার অংশের দিকের অনেক ঘরে আগুন দেয়া হয়। আগুনের শিখা ক্রমে বাড়ছিল। ৬টা ৩০ পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।
কাদের মধ্যে এই গোলাগুলি হয়েছে তা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রই নিশ্চিত করেনি। সীমান্ত এলাকার লোকজনের ধারণা দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়ে থাকতে পারে। এব্যাপারে সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবির কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে সকাল থেকে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় থেমে থেমে গুলির খবর জেনেছি। যেহেতু ঘটনাটি শূন্যরেখায়, সেখানে আন্তর্জাতিক রীতিমতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় অস্থিরতা চলছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে যা-ই ঘটুক আমরা নতুন কাউকে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে দেবো না। সে বিষয়ে সীমান্তরক্ষীরা সচেষ্ট রয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে আরসার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বিকেলে আরসার এক শীর্ষ নেতার স্ত্রীসহ তিন মাদক কারবারিকে বিজিবি আটকের ঘটনায় বিজিবির বিওপি লক্ষ্য করে আরসার সন্ত্রাসীরা কয়েকশ’ গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে বিজিবিও গুলি ছোড়ে।
তবে মঙ্গলবার রাতে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বালুখালী বিওপি থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে এবং সীমান্ত পিলার-২০ থেকে আনুমানিক ৮০০ গজ উত্তর-পূর্ব কোণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রহমতের বিল হাজিরবাড়ি নামক এলাকায় কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ির সঙ্গে গুলির ঘটনা ঘটেছে। ইয়াবা কারবারিদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ঘটনার পর থেকে সব বিওপি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.