‘মিশে গেছে অনেকেই মাদক ব্যবসায়ীও আমাদের সঙ্গে ’ রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা এক পুলিশ সুপারের

ছবি : Online

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক :  ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত পুলিশের একটি অংশ। বড় কঠিন তাদের সামাল দেওয়া । কারণ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিশে গেছে তাদের অধিকাংশ । একই সঙ্গে তারা  নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাই মাদক নির্মূলের পাশাপাশি জড়িত পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার একটি জেলার পুলিশ সুপার ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে মাঠ পর্যায়ের মাদক সম্পর্কে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার তথ্য তুলে ধরে বলেন, যারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সদস্যরা যদি খায়, পাচারে জড়িত থাকে, তাহলে মাদক পাচার রোধ কিভাবে সম্ভব? তবে আমরা কঠিন ও সঠিক থাকলে মাদক ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবে না।

জানা গেছে অনুসন্ধানে , শুধু সীমান্তবর্তী ওই জেলা নয়, রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের সব জেলারই অভিন্ন চিত্র। সীমান্তবর্তী এ জেলার চারটি উপজেলায় ১৬ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এ এলাকায় ২১৫ জন তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এছাড়া এ জেলায় ১১শ’ মাদক বিক্রেতা সক্রিয় রয়েছে। জেলার সব উপজেলায় পাড়া-মহল্লা, গ্রাম পর্যায়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রয় হচ্ছে।

মাদক বিক্রি হচ্ছে মুদির দোকান, ওষুধের দোকান এমনকি ফেরি করে । ছোট শিশু থেকে শুরু করে সবাই মাদক বহন করছে। অধিকাংশ থানার ওসিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন থানা পুলিশের কাছে যায় ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ ।

এ জেলায় ইতোমধ্যে ২ জন নিহত হয়েছে মাদকবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে  । গ্রেফতার হয়েছে ৬০ জন। ওই পুলিশ সুপার বলেন, সন্ধ্যার পর সীমান্তবর্তী এ জেলার সর্বত্র বসে মাদকের হাট। গ্রামে হাঁটতে গিয়ে গায়ে গায়ে লাগছে মাদকাসক্ত ও বিক্রেতারা। এভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ার পেছনে আমরাই দায়ী। পুলিশ সিরিয়াস হলে মাদক ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা সম্ভব নয়।

ওই পুলিশ সুপার কর্মস্থলে যোগদানের পর ৪ থানার ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, কনস্টেবলদের (মুসলমান) কোরআন শরীফে হাত দিয়ে শপথ করিয়েছেন, তারা যেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ না করেন। একইভাবে অস্ত্র হাতে তাদের শপথ করিয়েছেন। এই শপথের পর ৫০ ভাগ সফল হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ আগের অবস্থায় রয়েছে। তবে তিনি এমন ব্যবস্থা নিচ্ছেন যে, বাকি ৫০ ভাগ ঘুষ ছাড়তে বাধ্য।

কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, রেঞ্জের ডিআইজি ও জেলার এসপি যদি তাদের কাছ (থানা পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে) থেকে ঘুষ গ্রহণ না করেন কোন অবস্থাতেই শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে মাদক বিক্রি কিংবা ব্যবসা করা সম্ভব হবে না এবং এ ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না। তার এই শপথের পর পুলিশের চেয়ে বেশি সাধারণ মানুষ কিংবা বিভিন্ন পেশার মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে মাদক নির্মুল অভিযানে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

সফলতা অনেক বেশি পাচ্ছেন এতে মাদক নির্মুলের অভিযানে ফলাফলের । এছাড়া সেবনে জড়িতদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করছেন এই পুলিশ সুপার। সম্প্রতি একজনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ওই জেলা সদর এলাকার বাসিন্দা এবং রাজধানীর নামকরা ক্লাবের ফুটবলার ছিলেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি গ্রামে চলে যান।  বাবার একমাত্র পুত্র ছিলেন তিনি ।

মা ও অপর দুই বোনের দেখাশুনার জন্য ফুটবল ছেড়ে গ্রামে চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে গ্রামের বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে ইয়াবায় আসক্ত হন। ইয়াবার টাকার জন্য একমাত্র পুত্র সন্তান মাকে প্রায়ই মারধর করতেন। পরে মা পুলিশ সুপারের কাছে ফুটবলার এই পুত্রের করুণ কাহিনী তুলে ধরেন। পুলিশ সুপার পরে তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপার নিজেই ফুটবলারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

শেষ পর্যন্ত পুরো কাহিনী তিনি তুলে ধরেন ইয়াবা গ্রহণ থেকে । এক পর্যায়ে স্যার আমি বাঁচতে চাই  হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় পুলিশ সুপারের পায়ে জড়িয়ে বলেন, ।  শেষবারের মতো একটু সুযোগ দিন আমাকে।  তাকে চিকিত্সা থেকে আরম্ভ করে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেনএসপি নিজ উদ্যোগে ।  এক সপ্তাহের মধ্যে লোকটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তিনি পুলিশ সুপারকে বলেন, আমি সুস্থ।

আমার মাকে যে নির্যাতন করলাম ইয়াবার জন্য, এখন কিভাবে মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবো। এমন কুপুত্রকে ক্রসফায়ার দেন, আমি আর বাঁচতে চাই না। মা একমাত্র পুত্র সন্তানকে ক্ষমা করে বাড়িতে নিয়ে যান এবং এখন স্বাভাবিকভাবে সংসার পরিচালনা করছেন। এখন তিনি শুধু বলেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

তরুণ সমাজকে রক্ষা করার জন্য সকল অভিভাবকদের একযোগে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে এই তরুণ একই অভিমত ব্যক্ত করেন।জানা গেছে, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করেন তার প্রায় সবগুলোতে একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা সরাসরি ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচারে জড়িত।

তাদের কেউ ছুটিতে গেলেও নিজের পকেটে করে ইয়াবা নিয়ে যায়। কেউ কেউ ছুটিতে বড় বড় ইয়াবার চালান নিয়েও যাচ্ছে। এখন মাদক সীমান্তবর্তী এছাড়া ছাড়িয়ে সারাদেশের অলিগলি ও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কোনো কোনো রেঞ্জের কর্মকর্তা কিংবা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে থানার একশ্রেণির কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা উৎকোচ দিয়ে থাকে। পুলিশের ভিতরে এমনভাবে ইয়াবা পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এটা ভাঙতে না পারলে ইয়াবার পাচার রোধ কোনোভাবেই সম্ভব না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.