মা-বাবার স্মৃতি আঁকড়ে তিন সন্তানের নির্ঘুম রাত 

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার সন্ধারই উত্তর পাড়া গ্রামের একসময়কার নিবাসী ছিলেন নজরুল ইসলাম ও সুলতানা আনোয়ার শাহীন আলেয়া। ভালোবাসা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৯ জুন নজরুল ইসলামের মৃত্যুবরণ করেন এবং ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ আনোয়ারা শাহীন ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তাদের তিন সন্তান এক মহাশূন্যতার মধ্যে। পরিবারের সব বিষয়গুলি প্রিয় মায়ের সাথে শেয়ার  করা হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখের মধ্যে ভিড় করে উঠে তেড়ে আসা ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার! বাবা মায়ের অনুপস্থিতি প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন অন্ধকারের বন্যা বইয়ে দেয়। তবুও এমন কিছু প্রতিদিন কারো কারো জীবনে ঘটে চলে। এরপরেও মহান সৃষ্টিকর্তায় এক সময় এমন সুখ কেটে ওঠার সাহস জোগাতে সাহায্য করেন। মানবজাতির সাথে পৃথিবীর এ যেন এক নিত্যদিনের খেলা।
সংগ্রামী জীবনের অধ্যায়
নজরুল ইসলাম শৈশবেই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হন। দাদার আশ্রয়ে বড় হয়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজের জীবন গড়ে তুলেছিলেন। বাবার দেওয়া জমি আবাদ করে ফসল ফলিয়ে তিনি সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।
অন্যদিকে, সুলতানা আনোয়ার শাহীন আলেয়া ছিলেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সন্তানদের সুশিক্ষিত করাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। প্রতিকূল পরিবেশেও কখনো দায়িত্বে অবহেলা করেননি, প্রতিদিন মেঠো পথ পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতেন।
সন্তানদের সাফল্য
বাবা-মায়ের ত্যাগের ফলে তাদের তিন সন্তান আজ প্রতিষ্ঠিত জীবন গড়েছেন। বড় ছেলে বর্তমানে একজন সহকারী অধ্যাপক, তার স্ত্রী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। মেজো ছেলে কলেজে প্রভাষক ও সাংবাদিক এবং তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছোট ছেলে একজন সফল ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী গৃহিণী।
শোকের ছায়া
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের চিরবিদায় তাদের জীবনে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে। পবিত্র রমজান মাসে তারা বাবা-মায়ের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ দোয়া করছেন। তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষা ও আদর্শ তারা আগামীর পথচলার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘নজরুল ইসলাম ও আনোয়ারা শাহীন তাদের সন্তানদের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত। তাদের স্মৃতি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে অমলিন থাকবে।’
বর্তমানে তাদের ছয় নাতি-নাতনি বেড়ে উঠছে বাবা-মায়ের সেই আদর্শের ছায়ায়। পরিবারের সদস্যরা আশাবাদী, তারা দাদা-দাদির স্বপ্ন ও নীতির আলোকে নিজেদের জীবন গড়ে তুলবে।
শিক্ষা, ত্যাগ ও মানবতার যে পথ নজরুল ইসলাম ও আনোয়ারা শাহীন দেখিয়ে গেছেন, তা আজও সবার কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছে। তাদের স্মৃতি ও আদর্শ আগামীতেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম পথ দেখাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম শিল্পী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.