মাস্ক বিক্রি করে রাশেদার ভাগ্য বদল, গার্মেন্টসের মালিক হওয়ার স্বপ্ন!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম। অভাবের সংসার আর দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন একটি ভাঙা সেলাই মেশিনের সাহায্যে। সেই রাশেদা শুধু মাস্ক বিক্রি করেই লাখপতি হয়েছেন।ভবিষ্যতে গার্মেন্টসের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
জীবনের পথটা মসৃণ ছিল না রাশেদা বেগমের। বাবার ছিল অভাবের সংসার। এ কারণে স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই চলে আসেন স্বামীর সংসারে। সেখানেও অভাব। এরমধ্যেই তাদের ঘরে আসে দুই ছেলে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে একটু ভালো থাকার আশায় ২০১৬ সালে বাবা-মায়ের জমি বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে স্বামী ফারুক হোসেনকে বিদেশে পাঠান রাশেদা। সেই থেকে স্বামীর কোনো খোঁজ পাননি। সংসারের বোঝা বইতে না পেরে দুই ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমান বাবার বাড়িতে। এরপর নিজের ও সন্তানদের খরচ চালাতে রোজগারের কথা চিন্তা করতে থাকেন। তখনই হানা দেয় করোনাভাইরাস, বন্ধ হয়ে যায় রাশেদার আয়ের পথ।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে তখনই মাস্ক তৈরির পরিকল্পনা করেন রাশেদা বেগম। সেলাইয়ের কাজ জানা ছিল তার। এ কারণে একটা সেলাই মেশিন জোগাড় করে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। শুরু হয় তার মাস্ক তৈরি ও বিক্রি।
রাশেদা বেগম বলেন, মাস্ক তৈরির আগে নকশা তুলতাম খাতার কাগজ বা পুরান কাপড় কেটে। প্রথমদিন বাজার থেকে ৬০ টাকা দরে দুই গজ মোটা সুতি কাপড় কিনে ২০টা মাস্ক বানাই। সেগুলো রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি ৩০ টাকা করে। ওইদিনই আয় হয় ছয়শ টাকা। সেই টাকায় পরদিন সকালে আরো ১০ গজ কাপড় কিনে মাস্ক বানাই। তা বিক্রি করে আসে তিন হাজার টাকা। এভাবেই মাস্ক বানানো ও বিক্রি বাড়তে থাকে।
তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পর দেড় হাজার টাকায় নতুন একটি সেলাই মেশিন কিনে বেশি বেশি মাস্ক তৈরি করি। পাশাপাশি শহরের অলি-গলি, রাস্তা, হাট-বাজারে বিক্রি করতে থাকি। এভাবেই আমার মাস্ক বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়ে। সে খবর চলে যায় জেলা প্রশাসকের কাছে। জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসন থেকে দুই হাজার মাস্ক বানানোর অর্ডার পাই। এজন্য অগ্রিম চার হাজার টাকাও দেয়া হয়। সেই টাকায় কয়েক থান কাপড় কিনে শুরু করি কাজ।
শুধু জেলা প্রশাসন না, পাঁচটি উপজেলার প্রশাসন অফিস, হাসপাতাল, ওষুধের দোকানসহ অনেক জায়গা থেকে মাস্কের অর্ডার পেতে শুরু করেন রাশেদা বেগম। অল্পদিনেই কয়েকটি মেশিন কিনে ফেলেন তিনি। এছাড়া তাকে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন লালমনিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদুল হাসান রাশেদ।
বিভিন্ন ডিজাইনের মাস্ক তৈরি করে মানুষের নজর কাড়েন রাশেদা বেগম। এ কারণে তার তৈরি মাস্ক অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। মাস্ক তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেন তিনি। এতে পুরো লালমনিরহাট জেলায় মাস্ক-রাশেদা নামে পরিচিতি লাভ করেন। কাপড়ের মাস্ক বলতে রাশেদাকে সবাই এক নামে চেনে।
রাশেদা বেগমের সঙ্গে এখন নিয়মিত মাস্ক তৈরি করেন আরো পাঁচজন নারী। বেশি অর্ডার পেলে বাড়ির পাশের সেলাইয়ের কাজ জানা নারীদেরও কাজে লাগান তিনি। সময়মতো অর্ডার সরবরাহ ও মানসম্মত হওয়ায় রাশেদার মাস্কের চাহিদাও বেশি। মাত্র কয়েক মাসে মাস্ক বিক্রি করে ঋণের আট লাখ টাকা পরিশোধ করেও কয়েক লাখ টাকার মালিক হয়েছেন রাশেদা বেগম। এখন দুই ছেলের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারও সামলাচ্ছেন বেশ ভালোভাবে।
রাশেদা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। সংসার, দুই ছেলের পড়াশোনার পাশাপাশি মা-বাবার খরচ বহন করাও সহজ হয়ে গেছে। আরো কিছু টাকা হলে একটি কারখানা স্থাপন করব। সেখানে উন্নত মানের মাস্ক তৈরি করে সেগুলো বিদেশেও রফতানি করতে পারব। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা ফিরোজুর ইসলাম ফিরোজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, রাশেদা বেগম আমার কাছে এসে তার কষ্টের কথা বলে। তখন আমি তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে বলি। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে লালমনিরহাটের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, রাশেদা বেগম এক বছর শুধু মাস্ক বিক্রি করেছেন। আজ তিনি স্বাবলম্বী। তার তৈরি মাস্ক মানসম্মত। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন রাশেদার তৈরি মাস্ক জনগণের মাঝে বিতরণ করেছে। আগামীতে তার কাছ থেকে আরো মাস্ক নেয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.