মালয়েশীয় বিমান বিধ্বস্ত: যে রায় দিলেন নেদারল্যান্ডসের আদালত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের আকাশে মালয়েশীয় বিমান এমএইচ১৭ ভূপাতিতের ঘটনার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় আট বছর পর বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বহুল কাঙিক্ষত ওই রায় দেন নেদারল্যান্ডসের আদালত। রায়ে দুই রুশ ও রুশপন্থি এক ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
এদিন বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারক হেন্ড্রিক স্টেনহুইস বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা একটি বিচারে আইনজীবীদের উপস্থাপিত নথিপত্র থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী বোয়িং ৭৭৭ বিমানটিকে ‘বাক ক্ষেপণাস্ত্র’ দিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছিল। যার পেছনে ছিল মস্কোপন্থি ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রায় নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়তে পারে। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই নেদারল্যান্ডস থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে পূর্ব ইউক্রেনে ২৯৮ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় বিমান ফ্লাইট এমএইচ১৭। বিমানের নিহত যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ছিলেন ডাচ। বাকিরা ব্রিটিশ।
দ্য হেগ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের রায়ে আরও বলা হয়েছে, বিমান ভূপাতিত করার মামলায় সাবেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা আইগর গিরকিন ও সের্গেই দুবিনস্কির পাশাপাশি ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিড খারচেঙ্কোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তারা ইচ্ছে করেই একটি বিমানকে ভূপাতিত করেছেন।
এ তিনজনকে তাদের অনুপস্থিতিতেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরেক সন্দেহভাজন রুশ নাগরিক ওলেগ পুলালভকে খালাস দেয়া হয়েছে। প্রধান তিন আসামিই এখন পর্যন্ত পলাতক। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য রায় ঘোষণার দিন থেকে দুই সপ্তাহ সময় পাবেন তারা।
বিমান ভূপাতিত হয়ে ২৯৮ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নেদারল্যান্ডস বিমানটি ভূপাতিত করার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে। রাশিয়া তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে। ঘটনার তদন্তে মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তকারী প্যানেল গঠন করা হয়।
প্রায় চার বছরের তদন্ত শেষে ২০১৮ সালে যৌথ তদন্তকারী প্যানেল উপসংহারে পৌঁছায় যে বিমানটি ভূপাতিত করার জন্য যে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল তা রাশিয়ার ৫৩তম অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল ব্রিগেড থেকে ছোড়া হয়েছিল।
তদন্তকারীরা বলেন, রাশিয়ার আইগর গিরকিন, সের্গেই দুবিনস্কি ও ইগর পুলাটভ এবং ইউক্রেনীয় লিওনিড খারচেঙ্কোর পরিকল্পনায় বিমানটি ভূপাতিত হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘সন্দেহভাজনদের নির্দেশে ও নির্দেশনায়’ তার উৎক্ষেপণস্থলে আনা হয়েছিল।
এরপর অভিযুক্তদের সবার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয়। গত বছরের (২০২১) ডিসেম্বরে চূড়ান্ত শুনানির পর বিচারাধীন চারজন সন্দেহভাজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি করেন ডাচ আইনজীবীরা। চূড়ান্ত রায়ে আইনজীবীদের দাবিই প্রতিফলিত হয়েছে।
ডাচ আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেন। রায়ের পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যারা বিমানটি ভূপাতিত করার নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। ইউক্রেন সংঘাত শুরুর প্রায় ৯ মাস পর এ রায়কে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। (সূত্র: এপি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.