মান্দায় ৩৮ বছরের নারীর সঙ্গে ১৭ বছরের কলেজ ছাত্রের বিয়ে : অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় ৩৮ বছরের নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক বিপ্লব হোসেন কুইক (১৭) নামে এক কলেজ ছাত্রের বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বিরুদ্ধে। ওই নারী যুবকের প্রতিবেশী সম্পর্কে খালা।

বিপ্লব হোসেন কুইক সিংড়া গ্রামের আফসার আলী মন্ডলের ছেলে এবং মোহনপুর কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র।

গত শনিবার (৬জুন) রাতে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সিংড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (৬জুন) দুপুরে বিপ্লব হোসেনকে বাড়ি থেকে একই গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের মাতব্বরা আফাজ মাস্টার, তাইজুল, বাক্কার, জাম্মু, রশিদ, মোখলেছুর রহমান, কামরুল, বাচ্চুসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে মারপিট করা হয়।

পরে তাকে ধরে নিয়ে গ্রামের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় এবং ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা এসেও নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্র। দুপুর থেকে রাত অবধি কয়েক দফায় তাকে নির্যাতন করা হয়। এরপর গ্রামের এক স্বামী পরিত্যাক্তা তিন সন্তানের জননী ৩৮ বছরের নারীর সঙ্গে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া চালানো হয়।

ছেলের পরিবারকে বিষয়টি না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশের রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের মাতব্বরা ওই নারীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। শনিবার রাত থেকেই ওই নারী বিপ্লব হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত দুইবছর থেকে গ্রামের বাক্কার হোসেন ও জাম্মু বিভিন্ন ভাবে তাকে বিরক্ত এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি স্বামীকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা করে দেয়া হয়নি। অবশেষে আমার স্বামীকে ভুল বুঝিয়ে তালাক (ডির্ভোস) দেয়া হয়। তারাসহ আরো কয়েকজন মিলে ষড়যন্ত্র করে সম্পর্কে ভাগিনার সাথে জোরপূর্বক চেয়ারম্যানের নির্দেশে অন্যায়ভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি অন্যায়কারীদের বিচার দাবী করছি।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্র বিপ্লব হোসেন কুইক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার বয়স ১৭ বছর ৫মাস। আমাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের একটি বাড়িতে পরিকল্পিত ভাবে নিয়ে গিয়ে গ্রামের মাতব্বর তাইজুল, আফাজ মাস্টার, রশিদ, মোখলেছুর রহমান, কামরুল, বাচ্চু, বাক্কার এর নেতৃত্বে দিয়ে সন্দেহমুলক নির্যাতন করা হয়। পরে চেয়ারম্যান এসে আমাকে নির্যাতন করে এবং অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক খালার সাথে বিয়ে দেয়া হয়।

ছেলের বাবা আফসার আলী মন্ডল ও মা ফাহিমা বেগম অভিযোগ করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তারা আমার ছেলেকে অনেক নির্যাতন করেছে। এরপর জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর ওই মেয়েকে নিয়ে এসে আমার বাড়ির দরজা ভেঙে জোর করে রেখে যায়। ছেলের তো বয়স হয়নি। আর ওই মেয়ে প্রতিবেশী সম্পর্কে শালিকা হয়। তাকে তো আমরা ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারিনা। ছেলেকে যারা নির্যাতন ও অন্যায় করেছে তাদের বিচার দাবী করছি প্রশাসনের কাছে।

স্থানীয় মাতব্বর আফাজ উদ্দিন মাষ্টার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গোটা এলাকাবাসী জানে ওই নারীর সাথে ছেলের সম্পর্ক আছে। যেহেতু ছেলের বয়স হয়নি। আমি তাদের থানায় সোপর্দ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার তাদের বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের আয়োজনসহ সবকিছু চেয়ারম্যান নিজে করেছেন।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাজী আমিনুল ইসলামের সহকারী রমজান আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়েছিল। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে ছেলের বয়স কম দেখা যায়। এরপর আমি বিয়ে না পড়িয়ে চলে আসি। পরে কি হয়েছে জানিনা।

মান্দার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ওই গ্রামের মাতব্বররা অপ্রাপ্ত ছেলের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে আমার উপর দায় চাপাতে চাচ্ছে।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.