মান্দায় ইউএনও’র কাছে পিপিই চেয়ে না পেয়ে শিশু ডাক্তারের ফেসবুকে ক্ষোভ


নওগাঁ প্রতিনিধি: মহামারি আকার ধারন করেছে ‘করোনা ভাইরাস’। চিকিৎসক ও নার্স থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), গ্লোবস ও মাস্ক ব্যবহার করছেন।

ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে স্বল্পতার কারণে অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে কিনতে পারছেন না। নওগাঁর মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: আব্দুল হালিম এর কাছে এক ডাক্তার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) চেয়ে না পেয়ে তার ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি হলেন- ডা: ইকরামুল বারী টিপু। মান্দার প্রসাদপুর বাজারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই তার চেম্বার। বুধবার সকাল ১০টায় তার ফেসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ডা: ইকরামুল বারী টিপু তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছে- ‘আমি একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার (এমবিবিএস)। বিশেষ করে শিশু রোগি বেশি দেখতে হয় আমাকে।

বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষার জন্যই চেম্বার প্র্যাকটিস বন্ধ রাখতে পারলেই ভালো হতো। কিন্তু আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মি হওয়ায় এলাকার গরীব অসহায় মানুষ তাদের শিশুদের অসুখ হলে আমার কাছেই এসে থাকেন। ফলে তাদেরকে উপেক্ষা করার সুযোগ নাই আমার কাছে। বর্তমান সময়ে একজন ডাক্তার হিসাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাও জরুরী। সরকারের পক্ষ থেকেও বেসরকারি চিকিৎসকদের চেম্বারে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে/হচ্ছে ।

তিনি আরো লিখেছন- এমতাবস্থায় নিজেকে সুরক্ষিত রেখে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও মহোদয়ের কাছে একসেট পিপিই সরবরাহের আবেদন জানিয়ে বিফল হলাম। ইউএনও মহোদয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাত দিয়ে জানালেন যে বেসরকারি পর্যায়ের ডাক্তারকে পিপিই দেয়া যাবে না।

সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারগণই শুধু সুরক্ষিত থাকবেন, বেসরকারিদের সুরক্ষার প্রয়োজন নাই, এরকম মনোভাব কতটা যুক্তিযুক্ত তা বুঝবার মত জ্ঞানী হতে পারিনি এখনও।

বাইরে কোথাও পিপিই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে- এরকম কোন তথ্য জানা থাকলে তা জানিয়ে সহযোগিতার জন্য সকলের নিকট অনুরোধ র’লো।’

এ ব্যাপারে ডা: ইকরামুল বারী টিপু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পিপিই’র বিষয়ে গত রোববার উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম। এরপর সোমবার ইউএনও স্যারের ম্যাসেনজারে পিপিই এর জন্য আবেদন করেছিলাম। পরদিন ফোন দিয়ে- ইউএনও স্যারকে বলেছিলাম মান্দা হাসপাতালের চাইতে বিশেষ করে শিশুদের বেশি চিকিৎসা দিয়ে থাকি। সেদিক বিবেচনা করে নিজের নিরাপত্তার জন্য একসেট পিপিই চেয়েছিলাম। তিনি ডিসি স্যারের উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেন- বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য আপাতত পিপিই না দেয়ার জন্য নিষেধ আছে।

তিনি বলেন, যেহেতু এ ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের সম্মুখ ধারনা নাই। থিউরিক্যাল কিছু ধারনা পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কে কিভাবে আক্রান্ত হবে এটা বলা সম্ভব না। যেহেতু বাচ্চাদের গায়ে হাত দিয়ে দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হয়। যদিও মাস্ক ও গ্লোবস পরে দেখা হচ্ছে। সেদিক বিবেচনা করে আমিও আক্রান্ত হতে পারি। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট চেম্বারগুলো বন্ধ আছে। আবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন-‘সকল বেসরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা উচিত বলে তিনি মনে করছেন।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে আমি নিজেও রোগী হিসেবে যাচাই করতে জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নে ‘করোনা ইনফোতে’ নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এমন তথ্য দিয়ে প্রোফাইল পুরণ করে পাঠিয়েছি। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় কোন উত্তর আসেনি। নাগরিক সুবিধা সবার জন্যই সমান। একজন নাগরিক হিসেবে পিপিই চাইতেই পারি।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন অর রশীদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহারের একটা নির্দেশনা রয়েছে। এই মুহুর্তে ডাক্তার যে কোন রোগী বা সাধারন রোগী দেখতে পিপিই ব্যবহারের দরকার নাই। গ্লোবস এবং মাস্ক ব্যবহার করলেই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন। যার সিনথোম আছে তিনি হাসপাতালে আসবেন। এরপর ডাক্তাররা প্রয়োজনে পিপিই ব্যবহার করবেন। পিপিই মুলত ওয়ান টাইম।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.