মানুষের হাতেই ঝড়ে যাচ্ছে মানুষের প্রাণ: মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানবতা

লেখক: সুলতানা রাজিয়া জেসমিন: ছোটবেলায় কোরবানীর ঈদের সময় গরু কোরবানী করতে দেখতে যাবার জন্য খুব উৎসুক হয়ে থাকতাম। অথচ ঠিক জবাই করার দৃশ্যটা আমি দেখতে পারতামনা। চোখ বন্ধ করে রাখতাম।
প্রত্যেকবার একই ঘটনা হতো।
আমার দাদু বলতেন, কোরবানী করার আগের দিন গরু কান্নাকাটি করে। সে বুঝতে পারে তাকে জবাই করা হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম যে, সত্যি গরুর চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে। সে দৃশ্য দেখে আমারও চোখে অশ্রু আসত।
আজ বিবাহিত জীবনের গন্ডি পেরিয়ে এত বয়স হয়েছে এখনও আমি গরু জবাই এর দৃশ্যটা সহজভাবে দেখতে পারিনা।
এমনকি একটি মুরগী জবাই করার দৃশ্যও আমার সহ্য হয়না। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী এগুলো তো আল্লাহ হালাল করেছেন জবাই করে খাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন মানুষই নিচ্ছে মানুষের প্রাণ ?
এভাবে কেউ কি মানুষ মারতে পারে? তার চোখ উপড়ে ফেলতে পারে?তার নিথর দেহটাকে বিভৎসভাবে বিকৃত করতে পারে? কিভাবে মানুষের দেহকে আগুন দিয়ে চোখের সামনে জ্বালিয়ে দিতে পারে? কিভাবে একজনকে পাথর দিয়ে মারতে পারে।তাহলে আজ মানবতা কোথায়?? মানবতা কি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কোনো এক অজানা শক্তির কাছে??
আমি দুঃস্বপ্নেওে এমন ভাবতে পারিনা। এরকম কাজ যারা করে তারা কি সত্যি মানুষ ??
যার মধ্যে মায়া, মমতা, স্নেহ প্রেম, ভালোবাসা এক কথায় মানবিকতা আছে তারাই তো মানুষ। এইসব বৈশিষ্ট্য ছাড়া কেউ মানুষ হতে পারেনা। এরা মানসিকভাবে বিকৃত। এদের মানসিকভারসাম্য হারিয়ে গেছে।
যেমন- একটা বদ্ধ উন্মাদকে যদি রাস্তার পাশের নোংরা থেকে খাবার তুলে দেন সে যেমন খাবে, তার যেমন ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্যের কোনো জ্ঞান থাকেনা। তেমনি এসব মানুষ নামধারী সেবার নামে এতটাই হিংস্র নেশায় উন্মত্ত যে তাদের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। তা না হলে এরকম নরপশুর মতো কাজ কি কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব??
এরা আবার নিজেদের মুসলমান দাবী করে। আল্লাহর রসুলের শিক্ষা কি মানুষ হয়ে মানুষ মেরে ফেলা ?
এসব ঈমানঘাতকদের কাছ থেকে তোমাদের ঈমানকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানবতার মুক্তির জন্য, সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে কাজ করে যাওয়ার নামই মানবতা।
কোনোরকম দুনিয়াবী স্বাথের জন্য নয়। শুধু মানবতার কল্যাণের জন্য। আজ তারা তাদের জীবনটাও তোমাদের জন্য কোরবানী করে দিলো। তারপরও কি হে মানবজাতি, তোমাদের টনক নড়বেনা???
আর কতকাল……………????
আর কতদিন…………………………???
স্বজন হারানো ব্যাথা যদি না পেতে চাও, যদি নিজের প্রিয় মানুষটির দেহকে নরপিশাচদের উন্মত্ত হলি খেলার সরঞ্জাম হতে দিতে না চাও, তবে সোচ্চার হও, ঐক্যবদ্ধ হও এসব মানুষ নামের অমানুষের কাছ থেকে। জয় হোক মানবতার। ফিরে আসুক শান্তি মায়া,মমতা আর ভালোবাসায় ভরে উঠুক প্রতিটি প্রান।
লেখক: মোছা:সুলতানা রাজিয়া জেসমিন, বিএসএস (স্নাতক সম্মান), ল,কলেজ হবিগঞ্জ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.