মাদারীপুরে আ. লীগ নেতাকে মারধর, বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি: পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাদারীপুরের রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে (৫০) মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মারধর শেষে সালাম খন্দকারকে তার মোটরসাইকেলসহ উপজেলার পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ বুধবার (০৩ মে) সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উপজেলার বৌলগ্রাম এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
এ সময় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পল্লবী ও তার ছেলেদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাজৈরমুখী হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘অবরোধকারীদের বুঝিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। তারা চলে গেলে মহাসড়ক যানজট মুক্ত হয়।’
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম মোটরসাইকেল নিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের প্রবেশ করতেই তার মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল।
এ সময় পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান ওরফে পাভেলসহ ১০-১২ জন মিলে সালামকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে স্থানীয় লোকজন সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, ২০২২ সালের ‘১৫ আগস্ট’ উপলক্ষে ৩১ আগস্ট আয়োজিত খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালাম। এ সময় আব্দুস সালাম রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পল্লবীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে খন্দকার আব্দুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা দেন। এর জের ধরে পল্লবীর দুই ছেলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আব্দুস সালামকে একা পেয়ে মারধর করেন।
মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপর অর্তকিত হামলা চালায় পল্লবীর ছেলেরা। আমাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে পানির ভিতরে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে। আমার পরনে পাজামা ছাড়া সব ছিড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল বলেন, ‘তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে কেউ আঙুল তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরে ভিতরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি। পরে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ ভাই তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোনো এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছে। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না।’
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লার অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরতর তেমন কোনো আঘাত নেই। তবে তাকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারা হইছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর মাদারীপুর প্রতিনিধি মো. এস আলম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.