মাথা গোজার শেষ আশ্রয় হারাতে বসেছে ৩০টি পরিবার, নাটোরে ৪০বিঘা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প স্থাপনের অভিযোগ


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়নের ফুলস্বর গ্রামের প্রায় ৪০বিঘা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জোর করে খাস খতিয়ানভুক্ত দেখিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প স্থাপনের অভিযোগ করেছেন জমির মালিক দাবীদার ৩০জন গ্রামবাসী।
এ বিষয়ে নাটোরের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা বিচারধীন থাকার পরও চলছে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ কার্যক্রম।
ভূমিহীনদের স্থায়ী ঠিকানা ও মাথা গোজার জায়গা দিতে এই ৩০ পরিবারের জীবনের সকল সঞ্চয় দিয়ে গড়া মাথা গোজার শেষ আশ্রয় টুকু হারানোর শংকায় অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ফুলস্বর মৌজার ৬ নম্বর খতিয়ানের প্রায় ৪০ বিঘা জমির হাল খতিয়ানের (আরএস রেকর্ড) মালিক ছিলেন অর্পণা দেবী। একই গ্রামের আব্দুর রউফ, আব্দুর রব, আব্দুল হাই ও আব্দুল লতিফ নামে চার ভাই অর্পণা দেবীর নিকট থেকে এই ৪০ বিঘা জমি কিনেছিলেন।
এই চার ভাইয়ের নিকট থেকে জমি গুলো কিনে নেন গ্রামের ৩০ অধিবাসী। কয়েক বছর আগে গ্রামের মানুষ জানতে পারেন তাদের জমি গুলোর খাজনা খারিজ করা যাচ্ছে না। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে স্থানীয় তহশীলদারকে সাথে নিয়ে জমি গুলো পরিদর্শন করেন নাটোর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক জুবায়ের। পরের দিন থেকে সেখানে শুরু হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িঘর নির্মাণ। তৈরী হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।
গ্রামবাসীরা বলেন, তারা তাদের জীবনের সকল সঞ্চয় দিয়ে গড়া মাথা গোজার শেষ আশ্রয় টুকু হারাতে চান না। মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এই আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরীর কাজ বন্ধ রাখার দাবী জানিয়েছেন। মাথা গোজার শেষ আশ্রয় টুকু হারানোর শংকায় এসময় গ্রামের সাধারণ নারী পুরুষদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। গ্রামের ভ্যান চালক আব্বাস আলীকে এসব কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়তে দেখা গেছে।
এর আগে আব্বাস আলী চিৎকার করে বলতে থাকেন আমার আশ্রয়নের পাকা বাড়ি চাই না, অতো ছোট ঘরে কিছুই হবে না। আমার পুরাতন টিনের ভাঙ্গা বাড়িই ভালো। আমরা সেখানেই থাকতে চাই। গ্রামের মসজিদের ইমাম মাওলানা আশরাফুল ইসলাম বলেন, উচ্ছেদের খবর শোনার পর থেকে এই গ্রামের মানুষের খাওয়া ঘুম সব হারিয়ে গেছে, চলছে কান্নার রোল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বলেছেন, আমাদের ৪০বিঘা জমিকে একদিকে সরকার খাস খতিয়ান ভুক্ত দেখিয়ে দখল করে নিয়ে নিচ্ছে অপরদিকে যে চার ভাইয়ের নিকট থেকে আমরা জমি কিনেছিলাম তারাও আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে বাটোয়ারার মামলা করেছে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ জুবায়ের হাবীব বিটিসি নিউজকে জানান, তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশমুলে ১০০ বিঘার অতিরিক্ত জমি রাষ্ট্রের অনুকুলে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ মোতাবেক ফুলসর গ্রামের অর্পণা দেবীর স্বামী কালিচন্দ্র চক্রবর্তী তার পরিবারের ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ৩৬ একর জমি রাষ্ট্রের অনুকুলে ফিরিয়ে দেন। সরকার ১৯৭৮ সালের ২২ জুলাই ওই জমি সরকারের নামে খাস খতিয়ানভূক্ত করে। এখন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকার এসব জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন,এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীরা আদালতে মামলা করেছেন। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছুই করবো না।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিমার্ণ বন্ধ করা হবে না।
এ ব্যাপারে কোন অন্যায় আবদারও গ্রহনযোগ্য নয়। তবে যে ৩০টি পরিবার জীবনের সকল সঞ্চয় দিয়ে গড়া মাথা গোজার শেষ আশ্রয় টুকু হারানোর শংকা প্রকাশ করেছেন তাদের বাড়ি ঘর রক্ষার বিষয়টি মানবিক ভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.