মাটির নিচে স্বর্নালী গুপ্তধন! : গাইবান্ধায় চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: বর্ষার প্রমত্ত্বা ব্রম্মপুত্র তিস্তা যমুনার আগ্রাসী হয়ে যেমন গিলে খায় বসতি, তেমনই শুকনো মৌসুমে ফিরিয়ে দিচ্ছে কিষাণ-কিষাণীর স্বপ্ন।ব্রম্মপুত্রের ভাঙাগড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা মানুষগুলো চরাঞ্চলে চিনা বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
দিগন্তব্যাপী বাদামের সবুজপাতা হলুদ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে কৃষকরা। কেউ কেউ আগাম বাদাম তুলে রোদে শুকাচ্ছেন। চাষাবাদ সহজ, বিপণনে ঝামেলাহীন ও তুলনামূলকভাবে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা কাঁচা বাদামের নাম দিয়েছেন ‘গুপ্তধন’।
গাইবান্ধা জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বেষ্টিত ২৮ টি ইউনিয়নে ১৬৫টি চরে বন্যা পরবর্তী বালুময় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর চীনা বাদামের চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
চীনা বাদাম রোপনের পর অন্য ফসলের মতো সেচ, পরিচর্যার ও রাসায়নিক সারের খুব বেশি প্রয়োজন না হওয়ায় চীনা বাদাম চাষে ঝুঁকছে চাষীরা। ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদেও চরাঞ্চল নদের বুক জুড়ে অসংখ্য ছোট বড় চর।
আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল বাদামের জমি। সাদা বালুর জমিতে সবুজ আর সবুজ ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি লতানো বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা সোনালি রঙের বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।
উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কালাসোনা,কাবিলপুর, রতনপুর, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাতারকান্দি, রসুলপুর, হাড়ভাঙ্গা, ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, চন্দনস্বর, কাউয়াবাঁধা, চিকিরপটল, তালতলা, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, হরিচন্ডি, বুলবুল চর, ফুলছড়ি ইউনিয়নের খোলাবাড়ী, বাজে ফুলছড়ি,টেংরাকান্দি, দেলুয়াবাড়ী,গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা , গলনাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চরের জমিতে এবার ব্যাপকভাবে বাদামের চাষ করা হয়েছে। বাদাম পরিচর্যায় খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে।
এসব চরে বাসন্তী, সিংগা সাইস্টোর, বারী চিনাবাদাম-৫, বারী চিনাবাদাম-৬ সহ স্থানীয় জাতের বাদামের আবাদই বেশি করা হয়েছে। কৃষাণি ও কিশোর-কিশোরীরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছেন। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা জমি থেকে বাদাম হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন। বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার কৃষক পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
ফলে অনেকটাই দুর হয়েছে চরাঞ্চলের কৃষকদের নিত্য অভাব অনটন। তাদের মলিন মুখে ফুটেছে হাসি। চরের বালুতে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে বাদাম উৎপাদন হয় ২০-২৪ মণ।
প্রতিমণ কাঁচা বাদামের বাজার মূল্য ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে বাদামের ফলন অনেকটা ভালো ও বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় জেলার কৃষকরা উৎফুল্ল।
বাদাম গাছ প্রায় পরিপক্ক হওয়ায় চর এলাকায়  বালির নিচে হাত বাড়ালেই উঠে আসছে মুঠো মুঠো গুপ্তধন। প্রতিটি বাদাম গাছের মুঠি (উপরের অংশ) ধরে টান দিলেও উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালী রঙের চিনা বাদাম তথা বালির নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।
সুলতানপুর গ্রামের বাদাম চাষী আউয়াল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে বাদম চাষ করেছি।আশানুরূপ ফলন পাবো বলে আশা করছি।
একই গ্রামের বাদাম চাষী ছামছুল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ২০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়েছি আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।দাম ও আশানুরূপ পাওয়া যাবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমা বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে।কৃষক ন্যায্য মুল্য পাবে।
পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা কায়সার মিশু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এ উপজেলায় মোট ৮ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন চলতি মৌসুমে গাইবান্ধা জেলায় ৭ টি উপজেলার ২০০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ২০৭০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ও খরিপ মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলমান রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মো: শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.