মাওলানা সাদের কাছে নিজামুদ্দিন মারকাজের চাবি দেবে দিল্লি পুলিশ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কতাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের চাবি অবিলম্বে মাওলানা সাদের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মারকাজে ২০২০ সাল থেকে আরোপ করা পুলিশের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
নিজামুদ্দিন মারকাজ পুনরায় চালু করতে ওয়াকফ বোর্ডের দায়ের করা মামলা শুনানিতে সোমবার দিল্লির হাইকোর্ট এ কথা জানান।
এদিকে মারকাজের চাবি হস্তান্তর করতে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে আদালতকে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
শুনানিতে বিচারপতি জসমিত সিং বলেন, ‘আপনি (পুলিশ) কোন ব্যক্তির কাছ থেকে দখল নিয়েছেন সেই ব্যক্তিকে দখল ফিরিয়ে দেন। আপনাদের যা করার তা খুঁজে বের করুন। কিন্তু আপনারা চাবি ফিরিয়ে দেবেন। এটি নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন না।’
পুলিশ পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেছে- ‘আসল অধিকারী সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিতে এগিয়ে আসেনি। এটি দিল্লি ওয়াকফ আইনের অধীনে নেওয়া হয়েছে। এটার দখল নেওয়ার জন্য মুতাওয়াল্লিকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাকেই আবেদন করতে হবে দিল্লি ওয়াকফ বোর্ড নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ জানায়, মাওলানা সাদের কাছ থেকে ‘দখল নেওয়া হয়েছে’। তবে তিনি পলাতক ছিলেন। তখন মারকাজের প্রতিনিধিত্বকারী কৌঁসুলি বলেছেন, সাদ নিজামুদ্দিনেই আছেন এবং পলাতক নন এবং প্রয়োজনে তিনি পুলিশের কাছে হাজির হবেন।
আদালত পুলিশকে তিরস্কার করে বলেছেন, ‘আপনি কী দখলে আছেন? আপনি কোন ক্ষমতায় দখল করেছেন? মহামারি রোগ আইনে এ সম্পর্কিত এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল, তা এখন শেষ হয়েছে।’
আদালত দিল্লি পুলিশকে বলেন, ‘আপনি যদি মহামারি রোগ আইনের অধীনে একটি সম্পত্তি গ্রহণ করেন এবং একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেন, তবে সেই সময়ে যার দখলে ছিল, তাকে দখল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মামলা করতে হবে?’
দিল্লি হাইকোর্টের এই আদেশ এমন সময় এলো যখন উচ্চ আদালতে নিজামুদ্দিনের বাংলাওয়ালী মসজিদ, মাদ্রাসা কাশিফুল উলুম এবং সেটির ছাত্রাবাস পুনরায় খুলে দেওয়ার নির্দেশনার ব্যাপারে ওয়াকফ বোর্ডের দায়ের করা মামলার শুনানি চলছিল।
এর আগে গত মে মাসে, উচ্চ আদালত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল, যাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া মারকাজের কিছু অংশ পুনরায় খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় সরকার ওই অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে পুনরায় খোলার বিরোধিতা করেছিল।
চলতি মাসেই দিল্লি পুলিশ বাংলাওয়ালী মসজিদের মালিকানার প্রমাণাদি পেশ করতে ওয়াকফ বোর্ডের কাছে আবেদন করে।
ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষ থেকে সিনিয়র আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ওয়াকফের সম্পত্তি একমাত্র সৃষ্টিকর্তার এবং তারা শুধু এর রক্ষণাবেক্ষণকারী। সেই হিসাবে মারকাজের চাবি মাওলানা সাদের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছেন, ‘বিবাদীর (পুলিশ) কৌঁসুলি বলেছেন যে, তাদের প্রয়োজনীয় ফর্মে একটি ক্ষতিপূরণ বন্ড প্রদানের জন্য মাওলানা সাদের কাছে চাবি হস্তান্তর করতে কোনো আপত্তি থাকবে না।’
আদালত আরও বলেছেন যে, এ উদ্দেশ্যে কোনো নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চে একটি জমায়েতকে কেন্দ্র করে তাবলিগ সদস্যরা বিজেপি সরকারের রোষানলে পড়েন।
অনুষ্ঠানের বিষয়টি প্রকাশিত হলে তাতে অংশ নেওয়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েক হাজার অনুসারীকে গ্রেফতার করে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের সদর দফতরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। (সূত্র: এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.