‘মহাবিপদে’ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, লড়ছেন গদি রক্ষায়

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কয়েক সপ্তাহ হয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন লিজ ট্রাস। এর মধ্যে পড়েছেন মহাবিপদে। লড়ছেন প্রধানমন্ত্রিত্ব পদ বাঁচাতে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টিকে থাকতে ঘনিষ্ট মিত্র ও অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কোয়ারতেংকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এতেও শঙ্কা কাটছে না ট্রাসের। তার দলের ভেতরেই তাকে পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন বেশির ভাগ এমপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিজ তার নির্বাচনী প্রচারে কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর ওপর অনেকটা ভর করেই তিনি দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন। মূলত এর জেরেই তার প্রধানমন্ত্রিত্ব পদ এখন নড়বড়ে।
গত শুক্রবারেই অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কোয়ারতেংকে বরখাস্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে লিজ ট্রাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কাওয়াসি। এর পর দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানান।
সিএনএন বলছে, কাওয়াসি কোয়ারতেং বরখাস্ত হওয়ার তিন সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সংক্ষিপ্ত বাজেট ঘোষণা করেন। ওই বাজেটে কর ছাড়ের ছড়াছড়ি থাকায় বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। পুঁজিবাজারেও অস্থিরতা শুরু হয়। এক পর্যায়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড মূল্যমান হারিয়ে কয়েক দশকের সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে যায়।
এরপর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের হস্তক্ষেপ, সংক্ষিপ্ত বাজেট বাতিলের গুঞ্জন ও অর্থমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে— এমন খবরে বাজারের কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
তবে কাওয়াসি কোয়ারতেংকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েও বিপদ কাটেনি ট্রাসের। কেননা ট্রাসের কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা গিয়েছিল ওই বাজেটে। তবে একপ্রকার বাধ্য হয়ে এখন ধীরে ধীরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছেন ট্রাস। এজন্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে অর্থমন্ত্রী করেছেন তিনি।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি এখন যেমন বেসামাল হয়ে রয়েছে, ট্রাস কোনোভাবেই অর্থনৈতিক উত্তরণ ঘটাতে পারবেন না। তাই তার পদত্যাগ করা সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এরই মধ্যে অনেক এমপি আগাম নির্বাচন দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
দেশটির এমপিদের অনেকে মনে করছেন, ট্রাসকে সরিয়ে দিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হোক। ট্রাসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন সুনাক।
আল–জাজিরার লন্ডন প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু সাইমনস বলেন, কনজারভেটিভ পার্টি ট্রাসের বিকল্প হিসেবে অন্য আরেকজন নেতা খুঁজছেন, এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই নেতা কী একটি সাধারণ নির্বাচনের চাপ সামলাতে পারবেন কি না।
এদিকে নতুন বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছেন নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টও। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি খুব খুব কঠিন একটি কাজ করতে যাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে জনগণের কাছে সৎ থাকতে হবে।
এসবের মধ্যে ট্রাসের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট আনতে কনজারভেটিভ পার্টির শতাধিক এমপি চিঠি দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি বিরোধীরাও সরব হয়ে উঠেছে ট্রাসের পদত্যাগের দাবিতে। এদিকে ঋষি সুনাক দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তোরজোর শুরু করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকে সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে। (সূত্র: সিএনএন, আল-জাজিরা,গার্ডিয়ান)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.