মহানন্দায় রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:  চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দায় রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প এলাকার মালিকানাধীন ভূমি মালিকদের এখন পরিশোধ করা হয়নি জমি অধিগ্রহণের অর্থ। প্রকল্প শুরু থেকে প্রায় আড়াই বছর ধরে বার বার আশ^াস দিলেও হতাশাগ্রস্থ ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ২ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নারী-পুরুষ ও সন্তানরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে এই ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল খালেক, আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক, আলহাজ¦ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ মাসুদ আহমেদ, আসাদুজ্জামান, মোঃ বায়েজিদসহ অন্যরা। বক্তারা অবিলম্বে মহানন্দায় রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প এলাকার মালিকানাধীন ভূমি মালিকদের জমি অধিগ্রহণের অর্থ পরিশোধ করার জোর দাবী জানান। অন্যথায় জমির নায্য দাবী আদায়ে আরও কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী দেন।
শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে তাদের অর্থ পরিশোধের জন্য লিখিত কপি জমা দেন। এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান ভূমি মালিকদের নায্য মূল্য পরিশোধের আশ^াস প্রদান করেন।
লিখিত বক্তব্যে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা জানান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সম্মুখ সমর ও শাহাদাতের স্মৃতি বিজড়িত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন মহানন্দা সেতু সংলগ্ন এলাকায় এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাতে আমুল পরিবর্তণের লক্ষ্যে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম নির্মাণের উদ্দ্যেগ নেয়া হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কর্মকর্তাগণ এসে আমাদের জমিতে লেবার সেড, বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ও তৈরীকৃত বøক রাখার জন্য বাৎসরিক ভাড়ার চুক্তির কথা বলে মহানন্দা নদীর উপর রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল ১২০ দিনের মধ্যে আপনাদের জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হবে। অতঃপর সংশোধিত উ.চ.চ পাশ এর কথা বলে বারবার সময়ক্ষেপন করতে থাকে। সর্বশেষ একনেক এর সভায় পাশ হলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে বলা হয়। গত ২৯/০৮/২৩ সংশোধিত প্রকল্পটি একনেক এর সভায় পাশ হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়। কিন্তু অদ্যবধি জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করা হয় নাই। গত ২ বছরের মধ্যে আমরা বার বার আশায় বুক বেঁধেছি কিন্তু এখন আমাদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এবার আমরা বুঝে গেছি, আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে, আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এতদিন ধরে। তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তাদের উদ্দেশ্য তারা আমাদের নায্য পাওনা না মিটিয়ে আমাদের জমিতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করে চলে যাবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে চাই, জমি অধিগ্রহণ ছাড়া অবশিষ্ট কোন প্রকার কাজ করতে দেয়া হবে না। আমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যাদের একমাত্র সম্বল এই জমিটুকু। আর এ জমিটুকুই হারিয়ে তারা দিশেহারা, পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসবে। এমন পরিস্থিতে আমরা ভূমি মালিকগণ এই অনাচার বন্ধে জীবনের ঝুঁকি নিতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আর কাল বিলম্ব না করে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রতি দাবি অতি দ্রæত প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে ভূমি মালিকদের সকল প্রকার নায্য দাবি পূরণের পর প্রকল্পের বাকী কাজ সম্পন্ন করার জন্য। তারা আরো বলেন, আমরাও চাই, প্রকল্প হোক। কিন্তু প্রকল্প এলাকার জমির মালিকদের নায্য মূল্য বুঝিয়ে দিয়ে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রæত মেগা প্রকল্প ‘মহানন্দা রাবার ড্যাম’ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে।
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাম্পেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)’র পশ্চিমে রেহাইচর প্রান্তে ৫১২ মিটার এবং বারঘরিয়া প্রান্তে ৪৬০ মিটার। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১৫৭ কোটি ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৬৫ টাকা ৮৪ পয়সা। ১৫৫ কোটি ৪৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ১৯৫ টাকা ৮৯ পয়সা চুক্তিমূল্য ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বছর কাজ শুরু হয়ে প্রথম বছরের ৪০% নির্ধারিত সব কাজ সম্পন্ন হয় এবং ২০২৩ সালের ৩০মে প্রকল্পের মেয়াদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয় ৭০%। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধির কথা বলছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বিআইসি-এসএসআরআই(জিভি)। ২৫/০৮/২০২১ প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রকল্পের কাজ শুরু করে ০১/১১/২০২১ তারিখ।
মেগা প্রকল্পের কোন জমি এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ করাও হয়নি। আশ্বাস দিয়েই প্রকল্পের কাজ ২ বছর আগে শুরু হলেও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও এখন পর্যন্ত কোন অর্থও পান নি জমির মালিকরা। এনিয়ে নদীর উভয় পাড়ের জমির মালিকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন চান এলাকার মানুষ ও অধিগ্রহণের মধ্যে পড়া জমির মালিকরাও। তবে তাদের নায্য জমির মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে। জমির মালিকদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বার বার আশার বানী শোনালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এনিয়ে অনেকটা হতাশায় ভূগছেন নদীর দুপাড়ের জমির মালিকরা।
মহানন্দা নদীর উপর ৩৫৩ মিটার দৈর্ঘ এই রাবার ড্যাম নির্মানের কাজ শেষ হলে এলাকার অনেক উপকার হবে। রাবার ড্যাম নির্মানের কাজ শেষ হলে জেলার কৃষকরা নদীর পানি দিয়ে জমি আবাদ করে বিভিন্ন ফসলাদি ফলানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। পানি সংরক্ষন, কৃষি আবাদে পানির প্রয়োজন মেটানো, হারিয়ে যাওয়া দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষনসহ পরিবেশের অনেক উপকার হবে। জনস্বার্থে নেয়া এই মেগা প্রকল্প মানসম্মতভাবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হোক। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রæত জমির মালিকদের নায্য পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা হোক, এমনটায় আশা ভূক্তভোগী ও জেলাবাসীর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.