মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার: অসুস্থ বাবার দোহাই দিয়েও বাঁচতে পারেনি মুসলিমা

খুলনা ব্যুরো: খুলনায় মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর গ্রেফতার দুই যুবকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মস্তকও উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তার নাম মুসলিমা খাতুন (২০)। তিনি একটি জুট মিলে কাজ করতেন। মাত্র তিন দিনের পরিচয়ে খুনি রিয়াজের সঙ্গে দেখা করতে এসে নির্মমভাবে খুন হন মুসলিমা। রিয়াজের সঙ্গে দেখা করতে এসেই ধর্ষণের শিকার হন মুসলিমা।
এরপর বাবার অসুস্থতার কথা বলে তাদের কাছে আকুতি জানিয়েছিল, ‘তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কাউকে বলব না। আমার বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, আমি বাবার কাছে যাব।’ আকুতির পরও তাকে প্রাণে মেরে ফেলে রিয়াজ খন্দকার ও সোহেল ওরফে ইমন সরদার। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সেদিনের রোহমর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয় রিয়াজ ও সোহেল।
খণ্ডিত মস্তক উদ্ধারের পর তাত্ক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মোসতাক আহমদ বলেন, মস্তকবিহীন বিবস্ত্র তরুণীর লাশ উদ্ধারের খবর জানার পর গতকাল শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সোহেল ও রিয়াজ নামে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রিয়াজকে ফরিদপুর থেকে ও ফুলতলা থেকে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। নিহত মুসলিমার কাটা মাথার সঙ্গে যে বঁটি দিয়ে তাকে হত্যা করা হয় সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। মাত্র তিন দিনের সম্পর্কে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুসলিমাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ধর্ষণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে রিয়াজ ও সোহেল। হত্যার পর মৃত মুসলিমার লাশের ওপরও তারা পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ফুলতলা উপজেলার উত্তরডিহি গ্রামের একটি ধানখেত থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর (২০) মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐ দিন দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নিহত কিশোরীর হাত-পা দেখে লাশ শনাক্ত করে তার বড় দুই বোন আকলিমা খাতুন ও ফাতেমা খাতুন। পুলিশও তার আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় তার নাম মুসলিমা খাতুন।
এ ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৬ এর একটি টিম ফরিদপুর থেকে রিয়াজ খন্দকার নামে এক জনকে আটক করে। পরে ফুলতলা থেকে আটক করা হয় সাগর সরদার নামে আরেক যুবককে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা পৌঁনে ১২টার দিকে ফুলতলা উপজেলার যুগ্নিপাশা গ্রামের একটি নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুম থেকে নিহত মুসলিমার খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে রিয়াজের সঙ্গে মুসলিমার পরিচয় হয়। এরপর তারা একসঙ্গে দেখা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য রিয়াজ তার সঙ্গে সোহেলকে রাখে। বুধবার রাত ৮টা বা ৯টার দিকে মেয়েটিকে বাড়িটিতে নিয়ে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাকে দুই ঘণ্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। মেয়েটি যখন বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে, তখন বারবার আকুতি জানিয়ে বলে ‘তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কাউকে বলব না। আমার বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, আমি বাবার কাছে যাব।’ কিন্তু সোহেল ও রিয়াজ তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে পেছন দিক থেকে গলা মোচড় দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে তারা মুসলিমার লাশ কাঁধে নিয়ে ঐ বাড়িতে রাখে। এ সময় তারা লাশটি বিবস্ত্র করে ফের পাশবিক নির্যাতন করে। এসব কথা আসামিরা অকপটে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।
পরে রিয়াজ তার বাড়ি গিয়ে বঁটি নিয়ে মেয়েটির মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার পরনের কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে ঐ বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে রেখে। পরে তারা দুই জনে যে যার বাড়ি চলে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় দুই জন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। রিয়াজ খন্দকার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নিপাশা গ্রামের মোশাররফ খন্দকারের ছেলে ও মো. সোহেল ওরফে ইমন সরদার একই গ্রামের মিলন সরদারের ছেলে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.