মন্দার দিকে এগোচ্ছে রুশ অর্থনীতি

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত বছর ইউক্রেনে আক্রমণের পর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মস্কোর মুনাফা বেড়েছিল। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। যুদ্ধ যখন দ্বিতীয় বছরে চলমান এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জোরালো প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, রুশ সরকারের রাজস্ব আয় কমে আসছে এবং দেশটির প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে নিম্নগামী হচ্ছে।
রাশিয়ার বৃহত্তম রফতানি পণ্য গ্যাস ও তেল বড় আমদানিকারকদের হারিয়েছে। সরকারের কোষাগারেও চাপ পড়ছে। নভেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতের রুশ মুদ্রা রুবলের দরপতন হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বা দেশ ছেড়ে পালানোর কারণে শ্রমশক্তি কমে গেছে। ব্যবসায় বিনিয়োগে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সাবেক কর্মকর্তা আলেক্সান্ডার প্রকোপেঙ্কো বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদের মন্দার দিকে ঝুঁকছে।
অবশ্য অর্থনীতি এমন খারাপ বা স্বল্পমেয়াদি হুমকি হয়ে দেখা দেয়নি যার ফলে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় রাজস্ব কমে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্রমেই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। একদিকে যুদ্ধের বিশাল ব্যয় চালিয়ে যাওয়া এবং বেসামরিকদের দুর্ভোগে পড়া থেকে সহযোগিতা করা সামাজিক ব্যয় ও ভর্তুকি চালিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রুশ ধনকুবের ওলেগ ডেরিপাস্কা চলতি মাসে সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার নগদ অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বছর কোনও অর্থ থাকবে না, আমাদের বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রয়োজন।
ইউরোপীয় বাজার হারানো ও পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের চলে যাওয়ার কারণে রাশিয়াকে আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এতে আশঙ্কা বাড়ছে, রাশিয়া এক সময় চীনের অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত হতে পারে।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ থিংক ট্যাংক-এর সিনিয়র ফেলো মারিয়া শাগিনা বলেন, স্বল্প মেয়াদের রাশিয়া টিকে থাকার সক্ষমতা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে কঠিন: মস্কোকে আরও বেশি বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
এই পরিস্থিতির জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভুল বাজি দায়ী হতে পারে। গত বছর পুতিন ধারণা করেছিলেন, পশ্চিমাদের জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দিলে তারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।
কিয়েভের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করার বদলে ইউরোপীয় সরকারগুলো দ্রুত প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের নতুন উৎসের সন্ধান বের করে। ইউরোপগামী বেশিরভাগ রুশ গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে দাম বাড়লেও কিছুদিনের মধ্যেই তা কমে যায়। এখন মস্কো তেলের উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। জুন মাস থেকে নিজেদের তেলের উৎপাদন ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বিভিন্ন দেশের কাছে সস্তায় তেল বিক্রি করছে তারা।
এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব কমেছে প্রায় অর্ধেক। বেড়েছে বাজেট ঘাটতি। প্রথম দুই মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের দেড় শতাংশের সমান বা সামান্য বেশি। এতে দেশটি নিজের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের দ্বারস্থ হচ্ছে। যা দেশটির সংকট মোকাবিলার প্রধান তহবিল।
রুশ সরকার এখনও দেশের ভেতর থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে সক্ষম এবং সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে এখনও রয়েছে ১৪৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও যুদ্ধের পর এই তহবিল থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে। চীন ও ভারতের তেল বিক্রির উপায় পেয়েছে মস্কো। পশ্চিমাদের কাছ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের কিছু সরবরাহ করছে চীন।
রুশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি কঠিন বলে স্বীকার করছেন। কিন্তু তারা দাবি করছেন তাদের অর্থনীতি দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। পুতিন দাবি করেছেন, তার সরকার অর্থনীতির হুমকি মোকাবিলা করছে কার্যকরভাবে।
কয়েকজন অর্থনীতিবিদের মতে রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হতে পারে প্রায় ১ শতাংশ। কারণ উৎপাদন কমেছে এবং অর্থনীতি প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা প্রোকোপেঙ্কো বলছেন, রাশিয়ার মতো অর্থনীতির দেশের জন্য ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিছুই নাই, এটি এমনটি রক্ষণাবেক্ষণের মাত্রাও পড়ে না। (সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.