মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারণায় সরগরম যুক্তরাষ্ট্র

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পেতে মরিয়া ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলই। প্রচারণার শেষ দিকে এসে অন্যতম দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জোর দেয় দল দুটি।
এ অঙ্গরাজ্যে একই দিনে নির্বাচনী সমাবেশ করেন বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। গত শনিবার দুই সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিয়ে গেছেন একই বার্তা ‘ভোট দিন’।
দুই ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন ও বারাক ওবামা এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান ট্রাম্প বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের হাতে দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
মঙ্গলবারের এই নির্বাচন কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণ করবে। নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ তথা নিম্নকক্ষের সব (৪৩৫টি) আসন এবং সিনেট বা উচ্চকক্ষের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। প্রতি দুই বছর পর পর নিম্নকক্ষের আসনগুলোতে নির্বাচন হয়। এই ভোট প্রেসিডেন্টের চার বছরের ক্ষমতাকালের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে পড়লে তাকে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়।
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য দুটি সিনেট আসন বরাদ্দ। সিনেটের প্রতিটি আসনে ভোট হয় ছয় বছর পর পর। তিন ভাগে ভাগ করে নেওয়ায় প্রতি দুই বছর পর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোটগ্রহণ হয়।
দেশের আইন প্রণয়ন করেন নিম্নকক্ষের সদস্যরা। সিনেট সদস্যরা চাইলে সে বিল বাতিল করতে পারেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেগুলো তদন্ত করতে পারেন। তাই এই মধ্যবর্তী নির্বাচন খুবই গুরুত্ব বহন করছে উভয় দলের জন্য। এতে পরাজয়ের অর্থ আগামী দুই বছর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য আরো কঠিন হওয়া।
বর্তমানে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে থাকলেও সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারেন তাঁরা। তবে সিনেটে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য বেশি, আবার কিছু অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকানদের। পেনসিলভানিয়ার মতো কিছু অঙ্গরাজ্য আছে, যেগুলোতে বিভিন্ন নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন ফল আসে। এগুলোকে দোদুল্যমান রাজ্য বা ‘সুইং স্টেট’ বলা হয়। প্রেসিডেন্ট ও মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পায় এই অঙ্গরাজ্যগুলো।
পেনসিলভানিয়ায় জয়ই ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে এগিয়ে দিয়েছিল। আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জিতে নেন অঙ্গরাজ্যটি। দুই নির্বাচনেই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ছিল খুবই সামান্য।
সিনেট নির্বাচনে পেনসিলভানিয়ায় লড়ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন ফেটারম্যান ও রিপাবলিকান প্রার্থী মেহমেত ওজ। এই আসন সিনেটের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হতে পারে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া গুরুত্ব পাচ্ছে জর্জিয়া, ওহাইও, নেভাদা, অ্যারিজোনা ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিনেট নির্বাচন।
রাজ্যের অন্যতম শহর ফিলাডেলফিয়ায় প্রচারণায় বাইডেন বলেন, ‘কংগ্রেস ও সিনেটে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার অর্থ হলো গর্ভপাতের অধিকার ও জনস্বাস্থ্য সেবায় আরো বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়া। এবারের ভোট হবে নারীর স্বাস্থ্য, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য। ’
বারাক ওবামা বলেন, ‘ভোট হবে সত্য, সঠিক তথ্য, যুক্তি ও মৌলিক শিষ্টতার ওপর। ভোট হবে খোদ গণতন্ত্রের ওপর। এর (নির্বাচনের ফল) ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ’
গত শনিবার একই মঞ্চে বাইডেন ও ওবামাকে দেখতে হাজারো মানুষ সমবেত হন। তবে ভিড়ের মধ্যে অনেকে জানান, তাঁরা ওবামাকে দেখতে এসেছেন, শুধু বাইডেন হলে আসতেন না।
অন্যদিকে লাট্রোব শহরে রিপাবলিকানরা সমালোচনা করেছেন বাইডেন আমলের মুদ্রাস্ফীতি, অস্ত্র ও অভিবাসন নীতি নিয়ে। নিজের বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটদের হাতে ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকা মানে অপরাধ ও নিরবচ্ছিন্ন অভিবাসন আরো বাড়বে। আপনি যদি নিজের পরিবারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা চান, তাহলে ভোট দিয়ে সব ডেমোক্র্যাটকে পদছাড়া করতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের পতন সমর্থন করলে অবশ্যই তাদের ভোট দিন। ’ (সূত্র: বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.