মধু চাষ করে ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটালেন কার্পাসডাঙ্গার যুবক জানারুল 

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি: পরিশ্রম চেষ্টা আর লক্ষ মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। অনেকটা শখের বশেই বছর দুয়েক আগে মৌ চাষ শুরু করেছিলেন। তেমন কারিগরি প্রশিক্ষণ ছিল না, মৌ চাষিদের সাথে কথা আর বইপত্র ঘেঁটে মৌ চাষ ও খাঁটি মধু সংগ্রহের কলা-কৌশল জেনে নিয়েছিলেন তিনি।

এরপর জমানো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কাঠের তৈরি ৭টি মৌ-বাক্স কিনে আনেন এবং পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেন মৌ চাষে।বর্তমানে বছরে মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন তিনি।

মৌ চাষ ও মধু সংগ্রহ করে সংসারের অভাব দূরকারী এই ব্যক্তি হলেন দামুড়হুদা উপজেলার  কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের শাহাবুদিনের ছেলে জানারুল ইসলাম।

তার মতে, মৌমাছি পালনে একদিকে পরিবারে সচ্ছলতা আসে, অন্যদিকে মৌমাছির বিচরণে পরাগায়নের ফলে ফসলের উৎপাদনও বাড়ে।জানা গেছে, জানারুল ইসলাম কেবল মৌ চাষ করেন না; তার বর্তমানে পাতি হাঁসের খামার রয়েছে।সেখানে ৪’শ পাতি হাঁস রয়েছে।

তিনি আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মধু সংগ্রহও করেন।এরপর প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের সীমান্ত ঘেঁষা একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়,  ভারত সীমান্তে নিকট একটি পরিত্যক্ত জায়গায় সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌ-বাক্স।

মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব বাক্সে জমা করছে। প্রতিটি বাক্সের উপরিভাগ  পাটের বস্তা  দিয়ে মোড়ানো। পাটের বস্তার মোড়ক খুলে মৌ-বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে ধরে থাকা মৌচাক বের করা হচ্ছে।

এরপর মধু আহরণ যন্ত্র দিয়ে চাক থেকে মধু বের করে নেওয়া হচ্ছে। খামারের মালিক জানারুল ইসলাম  জানান, ৭-৮ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিটি মৌ-বাক্সে আছে একটি করে ‘এপিস মেলি ফেরা’ জাতের রানি মৌমাছি। রানির আকর্ষণ শতাধিক পুরুষ মৌমাছি মুখে মধু নিয়ে বাক্সে প্রবেশ করে মধু জমা রেখে চলে যায়।

রানিদের প্রত্যেকের শরীরের ঘ্রাণ আলাদা রকমের। এক বাক্সের মৌমাছিরা কখনো অন্য বাক্সে যায় না। ভুল করে গেলেও ওই বাক্সের মৌমাছিরা তাকে মেরে ফেলে।

আর রানিদের ঘ্রাণ যাতে বাইরে না ছড়ায় সে কারণেই প্রতিটি বাক্স  পাটের বস্তা   দিয়ে মোড়ানো হয়। রানি প্রতিদিন একটি করে পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে দৈহিক মিলন ঘটায়।

মিলনের পর পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়। তিনি আরও জানান, দুই ধরনের মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়।একটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন্য মধু এবং অপরটি দেশীয় জাতের মৌ চাষ।

সাধারণত বন্য মৌমাছিরা গাছের ডালে এবং বনজঙ্গলের চাকে মধু ছাড়ে। অপর দিকে দেশীয় মৌ চাষ হয় কাঠের তৈরি বাক্সের মধ্যে। জানারুল ইসলাম দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই মধু সংগ্রহ করেন।

খামারে বর্তমানে ৩৬ টি মৌ-বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বাক্সের মূল্য ৭-৮ হাজার টাকা। এই খামার থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড় মণ এর বেশি মধু উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

জানারুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালে মাত্র ৭টি মৌ-বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করেন। তারপর থেকেই মৌ চাষেই মনোনিবেশ করেন তিনি।

বর্তমানে তার দুটি সে এবং তির পিতা দায়িত্বে  রয়েছেন, যারা বছরে ৬মাস মধু সংগ্রহ করেন।  তিনি জানান, আমার এ চাষের মধু জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন মধু সংগ্রহ করেন।

এর মধ্যে সরিষা ফুলের মধু ছাড়া তিনি লিচু ফুলের মধু ও কালজিরা ফুলের মধু সংগ্রহ করেন।  ‘গত বছর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করেছি।

গাছি সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর আমার খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়।

এতে আমাদের মধুর গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। সরকারী ভাবে মধু বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে এবং সরকারিভাবে মৌমাছি রাখার বাক্স দেওয়া হলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হবো।’

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভুট্র জানান, জানারুল ইসলাম মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরও অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.