মৌলভীবাজারপ্রতিনিধি: মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা বাগান শ্রমিকদের কর্মবিরতি মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে কর্মবিরতি শুরু করেছে শ্রমিকরা।
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আজ মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের ১৬৫টি চা বাগানে শ্রমিকরা একযোগে পূর্ব ঘোষিত এ কর্মবিরতি পালন করেন বলে জানা গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার): চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কুলাউড়ার লংলা ভ্যালির ৩৪টিসহ সারা বাংলাদেশের চা বাগানে আগস্ট মঙ্গলবার সকালে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। প্রথম ৩ দিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি, এর পরের ৩ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলবে। দাবি না মানলে মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চা শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে গেছে। প্রতিদিন ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চলে না। চাল ডাল মসলা কিনতে গিয়ে মাছ কেনার টাকা থাকে না, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার টাকা জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। বাগান মালিকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও, মালিকরা নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ছে না।
তিনি বলেন, আমরা গত ১৯ মাস ধরে তাদের সঙ্গে মজুরি বাড়ানোর জন্য আলোচনা করতে চাইলে তারা (মালিক পক্ষ) আলোচনায় বসতেও রাজি হন না। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশের চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ যা সংসদের কাছে মজুরি বাড়ানোর আবেদন দিয়েছি, যদি ১০ আগস্টের ভেতরে মজুরি না বাড়ানো হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো। প্রয়োজনে বাগান কর্মবিরতি করে বিভিন্ন মহাসড়কে আমরা অবস্থান নেব।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত মনু-দলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের ৭ আগস্টের ঘোষিত সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চাবাগানে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে শুক্রবার থেকে তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনে করবেন।
সকাল ৮টায় কমলগঞ্জের শমসেরনগর চা বাগান কারখানার সামনে মনু-দলই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাইনকার নেতৃত্বে বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সম্পাদকসহ সকল নেতৃবৃন্দের অংশ গ্রহণে কর্মবিরতি পালন করা হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে উপজেলার আলীনগর চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালনসহ প্রতিবাদ সভা করে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, মনু ধলাই ভ্যালির সহ-সভাপতি গায়েত্রী রাজভর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি বাবুল মিয়া, সম্পাদক গোপাল রাজভর, সঞ্চয় ভর, বিদ্যা দাস, আশা কুর্মী, গীতা কাহার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরীর নেতৃত্বে সকাল ৮টায় মিরতিংগা চা বাগার কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালনসহ প্রতিবাদ সভা করে। এরপর দেওড়াছড়া চা বাগানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির মালিকানাধীন ভাড়াউড়া, খাইছড়া ও ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো সকাল ৯টার ভেতরে কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে চা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন কালে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
চা বাগানের নারী শ্রমিক গৌড়ি হাজরা বলেন, আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলেনা। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করছি। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি কিন্তু আমাদের এ কম মজুরী দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
ভাড়াউড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মো. নূর মিয়া বলেন, চা শ্রমিকদের একদিনের মজুরি দিয়ে ১ লিটার পেট্রল কেনাও সম্ভব নয়। শ্রমিকরা কি নিদারুণ কষ্টে রয়েছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছু হয় না। শ্রমিকরা ভালমন্দ খেতে পারে না। মজুরি বৃদ্ধি না হলে শ্রমিকরা কঠিন পরিস্থিতিতে পরবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা গত ১৯ মাস থেকে কত আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু মালিক পক্ষের টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণের কারণে কোন কিছুই করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩শ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরী হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কিভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ২ বছর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও কিন্তু ১৯ মাস পার হলেও মালিক পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। এ সময় তিনি আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এ ব্যাপারে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা শিবলী বিটিসি নিউজকে জানান, চা বাগান মালিকপক্ষ ও চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দে মধ্যে আলাপ আলোচনা চলমান রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধির সময়সীমা এখনো শেষ হয়নি ও শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালন করা বেআইনি বলে তিনি জানান।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.