ভোলাহাটের মহানন্দায় ভাসছে বিএসএফের গুলিতে নিহত-৩ জনের লাশ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে মহানন্দা নদীতে ভাসছে বিএসএফের গুলিতে নিহত তিন বাংলাদেশির মৃতদেহ। গত ১ অক্টোবর গভীর রাতে বিএসএফের গুলিতে ওই ৩ বাংলাদেশী নিহত হন বলে স্থানীয়রা জানান। এরপর থেকে ভোলাহাটের বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তে মহানন্দা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সুত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (০১ অক্টেবার) রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৭-৮ জনের একটি চোরাকারবারি দল ভোলাহাটের বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের সূখনগর সীমান্তে গরু আনতে যায়।

এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সূখনগর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কয়েকজন নদী সাঁতরে পালিয়ে এলেও গুলিবিদ্ধ হয় ৩/৪ জন।

এরপর থেকে ওই এলাকার জেলেদের নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে বিজিবি। রোববার বিকেলে জেলেদের বিছানো জাল তুলে আনার জন্য ১ ঘণ্টার সময় দেয় বিজিবি। জাল তুলতে গিয়ে মহানন্দা নদীর সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের (৪১ ও ৪২) কাছে দুটি স্থানে পানির মধ্যে দুটি লাশ একসঙ্গে বাঁধা এবং অপর লাশটি ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান জেলেরা। এসময় আতঙ্কিত জেলেরা দ্রুতই সেখান থেকে চলে আসে।

স্থানীয় জেলে সানাউল হক, আমিন আলী, মোহন আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুটি গুলির শব্দ আমরা শুনেছি। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে স্থানীয় জেকে পোলাডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা আমাদের নদীতে মাছ ধরতে দেয়নি। গত রোববার এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের জালগুলো তুলে আনার অনুমতি দেয়।

জেলে আবদুল জলিল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জাল তুলে আনতে গিয়ে নদীর শেষ সীমানায় একটি লাশ ভাসতে দেখেছি। আর জেলে সাদিকুল ইসলাম বলেন, নদীর শেষ সীমানায় বেগুনের ক্ষেতের পাশে দুটি লাশ একত্রে বাঁধা অবস্থায় দেখেছি। এরপরই ভয়ে দ্রুত ওই এলাকা থেকে চলে আসি।

এদিকে ভোলাহাটের কয়েকজন চোরাকারবারি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চোরাকারবারি দলের হোতা নামোপাঁচটিকরী গ্রামের সাজেদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ইঞ্জিল (৩৫) ও একই এলাকার দুরুল হোদার ছেলে নুরু মোহাম্মদ ওরফে নুরুদ্দীন (২৮) নিখোঁজ রয়েছেন। মিজানুর রহমান ইঞ্জিল ও তার পরিবার আত্মগোপনে রয়েছে। আর নুরুদ্দীনের পরিবারের দাবি কাউকে কিছু না জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয় নুরুদ্দীন।

নিখোঁজ নুরুদ্দীনের পিতা দুরুল হোদা এবং ভাই দেলোয়ার হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় চৌকিদারের মাধ্যমে জানতে পারি বিএসএফের গুলিতে নুরুদ্দীন মারা গেছে। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পায়নি। এখন যদি লাশটা ফেরত পেতাম তাহলে কাফন-দাফন দিতে পারলে মনে একটা শান্তি পেতাম।

ভোলাহাট ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা শোনার পর নিখোঁজ নুরুদ্দীনের পিতার সাথে বিজিবি ক্যাম্পে যাই। সেখানে অবহিত করলে বিজিবি অনুসন্ধানের আশ্বাস দেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৫৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাটি জানার পর থেকে মহানন্দা নদীতে লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ ধরনের কোনো ঘটনা জানা নেই বলে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে আমরা বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তে মহানন্দা নদীতে মাছ ধরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.