ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামার আগেই মনোনয়নপত্র বাতিল হলো যদের

ঢাকা প্রতিনিধিআসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। আজ রোববার সকাল থেকেই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। এই প্রক্রিয়া শেষে বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। আগামী ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম জানা যাবে।

ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামার আগেই নিজের দোষ-গাফিলতিতে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর। লড়াই জমার আগেই যেন শেষ হয়ে গেলো। বিএনপি-জাতীয়পার্টিসহ বিভিন্ন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভাগ্য ঝুলছে এখন আপিলের ফলাফলের উপর।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বড় বড় নেতার মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্যদিয়ে ধাক্কাটা শুরু হয়। ঢাকা-১ আসনে বিএনপির একজন প্রার্থীও টেকেননি। ফলে ভোটের লড়াইয়ের আগেই একটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনীত প্রার্থী বিজয়ের পথে এগিয়ে গেলেন এক ধাপ। যদিও আসনটিতে এখনো মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি।

সেক্ষেত্রে কে হচ্ছেন এই আসনে আগামী দিনের আইনপ্রণেতা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কেননা ওইদিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেদিন যদি আওয়ামী জোটের একক প্রার্থী থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আবারও বিনা ভোটে আইনপ্রণেতা হতে যাচ্ছেন জোটের কেউ।

এখানেই শেষ নয়, যাদের মনোয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তাদেরও সুযোগ থাকছে। এই পর্বে যারা বাতিল হয়েছেন তারা আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপিল করতে পারবেন। আগামী ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল করা যাবে। এরপর ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি হবে। সেক্ষেত্রে যাদের ছোটখাটো ভুল রয়েছে সেগুলো মার্জনা করে ফের প্রার্থিতা বহাল রাখার সুযোগও থাকবে।

যদি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপিল করেও প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখান থেকে নিষ্পত্তি হওয়ার পরে কেউ যদি আবার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আবেদনের পর নির্বাচিত হওয়ার পরেও প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ রয়েছে আইনে।

নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেরই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাদের সিদ্দিকী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রেজা কিবরিয়া, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান, গোলাম মাওলা রনি, অাসলাম চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ প্রমূখ।

খালেদা জিয়া: সকালে ফেনী-১ আসন ও দুপুরে ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনেরও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে বাকি দুটো আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

কাদের সিদ্দিকী: ঋণ খেলাফি হওয়ায় টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনের প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার: দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের দুই মামলায় সাজা হওয়ায় নাটোর-২ আসনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বিএনপির রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর।

রেজা কিবরিয়া: ক্রেডিট কার্ডের বিল না দেওয়ায় হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আজ রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার। রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হাওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই বিএনপিনেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়) আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) গিয়াসপুত্র সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এক সময় প্রবল প্রভাব বিস্তার করা বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবার ও স্বজনদের কারো প্রতিনিধিত্ব রইলো না।

আমানউল্লাহ আমান: ঢাকা-২ আসনের দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

গোলাম মাওলা রনি: হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আজ রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এই ঘোষণা দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিউল ইসলাম চৌধুরী। রনি পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

ইমরান এইচ সরকার: কুড়িগ্রাম-৪ আসন (রাজিবপুর,রৌমারী ও চিলমারী উপজেলা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেন।

খোকাপুত্র ইশরাক হোসেন: ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

আসলাম চৌধুরী: বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ায় আজ রোববার দুপুরে যাচাই–বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

আফরোজা আব্বাস: ঢাকা-৯ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আজ রবিবার দুপুরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ঋণখেলাপির অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে ঢাকা জেলা রিটার্নিং কার্যালয়।

মেজর (অব.) অাকতারুজ্জামান: কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী (অব.) মেজর আকতারুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে

শফি আহমেদ: নেত্রকোনা-৪ আসনে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকা শফী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রোববার (২ ডিসেম্বর) বেলা আনুমানিক ১২।টার দিকে মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ের সময় এই বাতিল আদেশ দেন জেলা রিটার্নিং অফিসার মইনুল হোসেন।

হিরো আলম: আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারদের তালিকা জমা দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার আশরাফ হোসেন তার মনোনয়ন বাতিল করেন।

আসাদুজ্জামান বাবলু: রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে দেয়া পদত্যাগপত্র জমা দিলেও গেজেট প্রকাশিত না হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

আমিনুল হক: রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মামলাসংক্রান্ত সার্টিফাইড কপি না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সেলিম ভূঁইয়া: ঢাকা-৫ আসনে ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী সেলিম ভূঁইয়ার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। নাসিমা আক্তার কল্পনা : ঢাকা-৭ আসনে বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা সোনালী ব্যাংকে ঋণখেলাপি হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। দলীয় প্রত্যয়নপত্র না থাকায় নাজমুল হক আওয়ামী লীগের নাজমুল হকের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

জাকির হোসেন: তথ্য গোপনের অভিযোগে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আবু আশফাক : ঢাকা-১ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে থাকায় বিএনপি নেতা আবু আশফাকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ফাহিমা হোসেন জুবিলীর মনোনয়নপত্রে বিএনপি মহাসচিবের স্বাক্ষর না মেলার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-১ আসনে বিএনপির ২ প্রার্থীই বাতিল।

কফিলউদ্দিন: ঢাকা-১৯ আসনে মোট ১২ প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থিতা গৃহীত ১০ জনের,করখেলাপির অভিযোগে বিএনপির কফিলউদ্দিনসহ মনোনয়ন বাতিল ২ জনের। খন্দকার ফরিদুল আলম : ঢাকা ১০ আসনে ঋণখেলাপের অভিযোগে গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

তমিজউদ্দিন: ঢাকা-২০ আসনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের গৃহীত কপি না থাকায় বিএনপির মো. তমিজউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঋণ খেলাপি ও আয়কর না দেয়ার দায়ে বিএনপির সুলতানা আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

মীর নাছির: চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলালের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে উল্লেখ করে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান।

রুহুল আমিন হাওলাদার:  ঋণ খেলাফি হওয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন পটুয়াখালী-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদার

নাজমুল হুদা: ঢাকা-১৭ আসনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে রিটানিং অফিসার।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.