ভেড়ামারায় আ. লীগ অফিসে ‘যুবলীগের হামলা’, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় রামদার কোপে এক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং এক কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গো-হাট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এ হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাতবাড়িয়া মন্ডলপাড়ায় শাহিন, জিদান, নাইম, রাসেল, রাজিব, আরিফ, আবুলের নেতৃত্বে যুবলীগের ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি গ্রুপ সাতবাড়িয়া গো-হাট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ওই সময় তারা অফিসের ভেতরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে নিচে ফেলে দেয়। এ ছাড়া তারা টেবিল-চেয়ারও ভাঙচুর করে।
এর আগে সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য রাহিদুল ইসলাম বুদু (৫৫) এবং সুলতান হোসেনকে (৪০) হামলাকারীরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের মাথায় রামদা দিয়ে কোপ দেওয়া ছাড়াও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে আহত দুজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর থেকেই দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপক্ষের লোকজন পাল্টাপাল্টি হামলার প্রস্তুতি নিয়ে দুই দিকে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
প্রত্যক্ষদর্শী চা-দোকানি গাদন প্রমানিক বলেন, ‘৩০ থেকে ৩৫ জন হামলাকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র রামদা, কিরিচ, দা হাতে নিয়ে এ হামলা চালায়। তারা এসেই ককটেল বোমা ছোড়ে। তারপর অফিসের চেয়ার-টেবিল, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে ছুড়ে ফেলে। পরে আমার চায়ের দোকান ভাঙচুর করে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা নিয়ে চলে যায়।’ হামলাকারীরা সবাই যুবলীগের কর্মী বলে জানান তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সদস্য শরিফুল ইসলাম নবাব বলেন, ‘হামলাকারীরা অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালায়। তাদের হামলায় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু এবং কর্মী সুলতান আহত হয়েছেন। তাদের মাথায় রামদার কোপ লেগেছে। দুজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া নামধারী অনুপ্রবেশকারী এসব যুবলীগের কর্মীরা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের ক্যাডার বাহিনী। তারা বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময়ে থেকে যুবলীগ নেতা আজিজের হাত ধরে যোগদান করে। হামলাকারীদের আশ্রয় দাতাসহ এসব সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুল ইসলাম লালু বলেন, ‘এসব হামলাকারী একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। যুবলীগের এক নেতার হাত ধরে দলে অনুপ্রবেশ করেছে। এরা এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং হামলা-অশান্তি সৃষ্টি করেই চলেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করার স্পর্ধা দেখিয়েছে। দ্রুত এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ধরমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িতরা কেউ আমার লোকজন নয়। শুনেছি গানের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজু নামের একজনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মারধর করে আহত করা হয়। তারাই এর জের ধরে এ হামলা চালিয়েছে। এরা আমার লোকজন—এমন কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাচ্ছে একটি পক্ষ। আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমিও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
ভেড়ামারা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মো. আলাউদ্দিন হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.