ভূরুঙ্গামারীতে হাট-বাজারে দেখা মিলছে প্রচুর দেশী প্রজাতির মাছ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা মিলছে প্রচুর দেশী প্রজাতির মাছ। দাম কিছুটা কমের কারণে খুশি ক্রেতারা আর দাম কম হলেও অনেক বেশি মাছ ধরতে পেরে খুশি জেলেরা।

ভূরুঙ্গামারীতে এবার বৈশাখ মাসেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রকৃতি তার স্বরূপ ফিরে পেয়েছিল। বৃষ্টি আর দীর্ঘস্থায়ী দু’দফা বন্যায় উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল, প্লাবন ভূমি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

বর্ষাকাল যেন ভালোভাবেই জানান দেয় এবার। বৃষ্টির পানির সাথে উঠে আসা ডিমওয়ালা দেশী প্রজাতির মা মাছগুলো উপজেলার ৫টি নদী ও খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে পায় বংশ বিস্তারের এক সুবর্ণ সুযোগ।

তাদের বিচরণ ক্ষেত্রে অবাধে ডিম ছাড়ার সুযোগ পাওয়ার ফলে এবার দেশি মাছের প্রচুর সমারোহ দেখা যাচ্ছে উপজেলার হাট- বাজা গুলোতে।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাস মাছের প্রজনন কাল। কিন্তু এর আগেই উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে মা মাছ নিধন করতো এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা।

বিভিন্ন পয়েন্টে কুঁচ, জুইতা, টেঁটা, কারেন্ট জাল, বেড়জাল, চাই, খরাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের উৎসব চলতো। বর্ষা আসার আগেই খাল বিলে মা মাছ নিধন চললেও দেখার কেউ ছিলোনা।

অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে ডিম ওয়ালা মা মাছ ও ছোট পোনা মাছ ধরা, খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের অনুকূল পরিবেশ সংকট হওয়ার কারণে দিনকে দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিলো।

উপজেলার দুধকুমার, ফুলকুমার, কালজনী , গঙ্গাধর ও সংকোষ নদী মূলত মাছের প্রধান উৎস।

এছাড়াও সোনাহাট ছড়া, পাইকেরছড়া, বহলগুড়ি বিল, কেদার বিল, তিলাই ছড়া, ভেড়ভেড়ি বিল, দলবাড়ী বিল, ঝুকিয়া বিল, নাউডাঙ্গা বিল, নলেয়া নতুন ছড়া ও শরবোঝা বিল সহ ছোট বড় অনেক খাল বিলে প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্ষা মৌসুমে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে।

ওই সময় এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি কারেন্ট জাল ও ভারতীয় এক প্রকার টানা জাল দিয়ে মা মাছ শিকার করার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হচ্ছিল না। ফলে দেশীয় প্রজাতির এই মাছগুলো বিলুপ্তির পথে।

অপর দিকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বর্ষা মৌসুমেও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলের খরা প্রবণ এ উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পারতো না। যতটুকু বংশ বিস্তার ঘটতো তাও আবার খরায় শুকিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল সেচে নিধন করা হতো দেশি মাছের পোনা।

কিন্তু এবার মাছের প্রজননের সময় থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে লোকজন বাইরে বেড় হতে না পারায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র স্বাভাবিক থাকায় উপজেলার গ্রামগঞ্জের হাটবাজার গুলোতে নানা ধরনের দেশি মাছের সমারোহ চোখে পড়ছে।

সুস্বাদু ও পুষ্টি গুনে ভরা দেশীয় এসব মাছের মধ্যে কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, টাকি, চিতল, বালিয়া, কাকিলা, চাপিলা, চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, বাটা, পিয়ালি, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাসি, বড় বাইম , শালবাইম, কুচিয়া, টাটকিনি, ধুতরা, গছি, বইরালি, গোলসা প্রজাতির দেশীয় মাছ গুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষকৃত জমিতে ভেসে উঠছে মাছ। আর ঐ মাছ ধরার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।কেউ চালুনি, কেউ ডালি, কেউ আবার ছোট জাল দিয়ে ধরছে সেই মাছ। এ দৃশ্য যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে হারানো সেই সোনালী অতীত।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মৎস্য সংরক্ষণ আইনে সব ধরনের মা ও পোনা মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোটা উপজেলায় এবার যথারিতি তা মনিটরিং করা হয়েছে। ফলে বিলুপ্ত প্রায় দেশি মাছের সর্বরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.