ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জাতিসংঘের

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বিশাল অঞ্চলজুড়ে বড় শহরগুলো সুনামি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এবং এ ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যেকোনো সময় সাগরের উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে শহরগুলো। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ।
ভূমধ্যসাগর এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যবর্তী একটি সাগর। এটি জিব্রাল্টার প্রণালীর মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত। এটা উত্তরে দক্ষিণ ইউরোপ ও তুরস্কের আনাতোলিয়া, দক্ষিণে উত্তর আফ্রিকা ও পূর্বে লেভ্যান্ট তথা সিরিয়ার ভূখণ্ড দ্বারা আবদ্ধ।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় বড় শহরগুলো মূলত সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বলছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার এ শহরগুলোতে যেকোনো সময় অন্তত ১ মিটার উঁচু সুনামি আছড়ে পড়তে পারে। এবং এর সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়ার মতো সাগর তীরবর্তী শহরগুলো সুনামির সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তারা বলছেন, এর সম্ভাবনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটার সময় নিয়ে। তারা আরও বলছেন, সমুদ্রে পানির স্তর দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মতো ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এ ব্যাপারে সচেতন নয়।
২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণায় দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান সমুদ্রস্তর সুনামির ঝুঁকির বড় কারণ। এর ফলে ফুলে ওঠা পানি বহুদূর পর্যন্ত গড়াতে পারে। ইউনেসকোর তথ্য মতে, এ মুহূর্তে ভূমধ্যসাগর পাড়ের অন্তত ২১টি দেশ সুনামির জন্য একেবারে ‘প্রস্তুত’ অবস্থায় রয়েছে। সুনামির ব্যাপারে এ দেশগুলোকে একই সঙ্গে সতর্ক ও মোকাবিলায় প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে ইউনেসকো।
চলতি শতকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভয়াবহ ও প্রলংকরী সুনামির ঘটনা ঘটেছে। এসব সুনামিতে হাজার হাজার মৃত্যুর পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবশেষ চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এক আগ্নেয়গিরিতে বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের পর বিরাট সুনামির সৃষ্টি হয়। এটি পুরো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কাঁপিয়ে দেয়। অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট সুনামিতে সবচেয়ে বিপর্যয়কর ক্ষয়ক্ষতি হয় দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গায়। এখানকার সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়। ঘন ছাঁইয়ের স্তরে ছেয়ে যায় বিশাল এলাকা।
এর আগে ২০০৪ ও ২০১১ সালে আরও ভয়াবহ দুটি সুনামি আঘাত হানে। এতে যথাক্রমে ২ লাখ ৩০ হাজার ও ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৪ ও ২০১১ সালের সুনামি ছিল বড় সতর্কবার্তা। এরপর অনেকটা সময় পার হয়েছে।
ইউনেস্কোর প্রধান সুনামি বিশেষজ্ঞ বারনার্দো আলিয়াগা বলেন, ২০০৪ সালের পর অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি আমরা। এখন আমরা অনেকটা নিরাপদ। কিন্তু এক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি আরও ভালো ও উন্নত হওয়া দরকার।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামি নিয়ে সতর্কতা ও এর মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে জাতিসংঘ। ২০০৪ সালের পর থেকে প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার অন্তত ১২৫টি সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। সম্প্রতি তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশে নতুন করে ১২টি সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.