ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল


প্রেস বিজ্ঞপ্তি: দেশের নারীমুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ আজীবন আত্মত্যাগী বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল)। ২০০৯ সালের এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের মানবতাবাদী এ সমাজসেবী।
মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে রাজশাহীতে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে উন্নত খাবার বিতরণ করবে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর হযরত শাহ মখদুম রূপোষ (রহঃ) এর মাজারে এ খাবার বিতরণ করা হবে।
এরপর বিকেল ৪টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের সংগ্রামী জীবন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের সুযোগ্য সন্তান ও রাজশাহী প্রেসক্লাব-জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলার সঞ্চালনায় এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টর থেকে প্রকাশিত “বাংলার কথা” পত্রিকার কলম সৈনিক বিশিষ্ট কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত কুমার সাহা।
এ সময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখবেন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সহঃ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল, সালাউদ্দীন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক দুখু, প্রচার সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলে বেগম মনোয়ারা রহমান একজন অনুসরণীয় নারীনেত্রী। রাজশাহীর প্রখ্যাত আইনজীবী ভাষাসৈনিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এ্যাডভোকেট মাদার বখশ্রে প্রথম সন্তান হিসেবে মনোয়ারা রহমান আজীবন নিজ পিতাকে অনুসরণ করেছেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর জননেতা এম আতাউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে গণমানুষের মুক্তি সমৃদ্ধির জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে গেছেন। তাঁদের মতো আত্মত্যাগী সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানবমুক্তির ইতিহাসে বিরল।
অনন্ত মাতৃত্বের গৌরবধন্য মাদার বখশের স্নেহময়ীরূপ ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের চরিত্রে পূর্ণতা পেয়েছে। ভাষা আন্দোলনের সময় তিঁনি ছিলেন ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। রাজশাহীর সচেতন নারী ও পিএন গার্লস স্কুৃলের ছাত্রীদের নিয়ে মনোয়ারা রহমান অগ্নিশিখা মিছিল বের করেন। ছাত্রী জীবনে তিঁনি ছিলেন অধিকার সচেতন। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচার ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। রাজশাহী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
গণমানুষের মুক্তির রাজনীতি মানবপ্রেম ছিলো তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। ৫২, ৫৩, ৫৪ সালে বেগম মনোয়ারা রহমান সারাদেশে এক আলোচিত নাম। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ ও জাতি গঠনে সমাজসেবার ক্ষেত্রে তিঁনি বিগত ৪০ বছর ধরে নারী সমাজের উন্নয়ন, নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ নিঃস্বার্থভাবে অনন্য অবদান রেখে গেছেন।
রাজশাহী মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিঁনি পবা, মোহনপুর, চারঘাট, তানোর, গোদাগাড়ীসহ অত্র অঞ্চলের গবাদিপশু ও মৌমাছি পালন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিঁনি ১০ হাজারেরও অধিক নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। অসহায় নারীদের সেলাই, বুটিক, এম্ব্রোডারি ও চামড়ার উপর কারুকাজ, তাঁতশিল্পে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনে তিঁনি একক ভূমিকা পালন করেন।
আজীবন আত্মত্যাগী মনোয়ারা রহমানের জীবন ও কর্মের আজো কোনো মূল্যায়ন হয়নি। মহান ভাষাসৈনিক দেশ ও জনগণের একবুক কাছের এমন মানবিক ব্যক্তিত্বকে যদি মূল্যায়ন করা না হয়- তাহলে এটি জাতির জন্য দূর্ভাগ্যজনক। মানুষের ভালবাসাকে অস্বীকার করে মানুষ কোনো অবস্থাতে এগিয়ে যেতে পারেনি। মানুষের ভালবাসাই মানুষকে বিজয়ী করে, প্রতিষ্ঠিত করে। বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে অনন্ত সলিলা ফাল্গুনধারার মতো এমন আত্মত্যাগী মানব ব্যক্তিত্ব আছে বলেই, জাতি আজো টিকে আছে। মানুষের কোনো আত্মত্যাগই বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না।
বার্তা প্রেরক: আমানুল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ, সদস্য, রাজশাহী প্রেসক্লাব। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.