ভারী বর্ষণে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে পানি, ভোগান্তিতে রোগীরা

সিলেট ব্যুরো: গতকাল রবিবার (২ জুন) রাত ১০টার পর থেকে সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং প্রায় একটানা সারারাত চলে এ বৃষ্টিপাত। আজ সোমবার (৩ জুন) ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত একাধিকবার সামান্য সময়ের বিরতি দিয়ে টানা চলছে বৃষ্টিপাত। টানা বৃষ্টিপাতে সুরমা নদীর পানি ফের বিপৎসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এতে নগরের নতুন পুরনো মিলিয়ে ৪২ ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক এলাকা এক রাতের বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে।
বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ভারী বর্ষণে সিলেট বিভাগে চিকিৎসাসেবার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জলমগ্ন হয়েছে। রাতের টানা ভারী বর্ষণে আজ সোমবার (৩ জুন) ভোর পাঁচটার দিকে ওসমানী মেডিক্যাল এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। হাসপাতাল চত্বর হাঁটু পানি হওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতরে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগী, স্বজন, চিকিৎসকসহ হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটার দিকে হাসপাতালের ভেতর পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে সিট না পেয়ে ফ্লোরে থাকা রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন।
রোগীর সঙ্গে থাকা এক স্বজন রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ভোর পাঁচটার দিকে হাসপাতালে পানি ঢুকতে শুরু করে। তখন ফ্লোরে থাকা রোগীদের নিয়ে আমরা বিপদে পড়ি।
পরে দ্বিতীয় তলায় অনেকে আশ্রয় নেন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের আসলে খুব বেশি কিছু করার নেই। তবু তারা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। এভাবে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়লে তাদের কি করার থাকে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘ভোরের দিকে হাসপাতালের ভেতর পানি প্রবেশ করে।
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের একধরনের প্রস্তুতি ছিল। বালুর বস্তা প্রস্তুত করা ছিল। সেগুলো দিয়ে অনেকটা রক্ষা করা গেছে। কিন্তু চারটা ওয়ার্ড রক্ষা করা যায়নি, পানি ঢুকে পড়ে।’
আজ দুপুর ১২টার দিকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। কিছু কিছু জায়গায় রয়ে গেছে। প্রশাসনিক ভবন থেকে নেমে গেলেও প্যাথলজি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ কিছু জায়গায় এখনো পানি আছে। তবে হাসপাতাল চত্বর এখনো জলমগ্ন।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, আজ সোমবার (৩ জুন) সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭ পয়েন্ট ২ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার এবং ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। এর আগে গতকাল রবিবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৬ মিলিমিটার। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন। তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্ভাবাস আগেই দেওয়া ছিল। আজ সোমবার ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ মিলিমিটার।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, রবিবারের তুলনায় নদ-নদীর পানি ফের বেড়েছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার রেকর্ড অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসিদে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গতকাল রবিবার সন্ধ্যার রিপোর্ট অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একইভাবে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ভারী বর্ষণের পাশাপাশি সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রবিবার দিবাগত রাত থেকে সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, কুশিঘাট, সোবহানীঘাট, যতরপুর, তেরোরতন, সাদারপাড়, শিবগঞ্জ, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, হাওয়াপাড়া, মীরের ময়দান, সাগরদিঘীর পার, পায়রা, দরগামহল্লা, মুন্সীপাড়া, নাইওরপুল, সোনারপাড়া, বালুচর, কাস্টঘর, পুলিশ লাইনস, কেওয়াপাড়া, খাসদবির, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, লালদিঘীরপার ও মেজরটিলাসহ বিভিন্ন এলাকা ভোরের আগেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিলেট ব্যুরো প্রধান মো. জাকিরুল হোসেন জাকির। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.