ভারতে ভোটের লড়াই হবে ইন্ডিয়ার সঙ্গে এনডিএর

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগামী বছর লোকসভা ভোটের মূল লড়াই হতে চলেছে ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে ‘এনডিএ’র। আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বিজেপিবিরোধী ২৬টি দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে নতুন জোটের নাম ঠিক করা হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘ইন্ডিয়া’। দুই দিনের এই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, নতুন জোটের পরবর্তী বৈঠক বসবে মুম্বাইয়ে। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
দুই দিনের এই বৈঠকে একতাবদ্ধ হওয়ার তাগিদই ছিল মুখ্য। সে জন্যই বোধ হয় বৈঠক স্থলসহ সর্বত্র ব্যানারে লেখা ছিল ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড’। বৈঠকের পর নতুন জোটের নাম ঘোষণা করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তবে এই জোটের চেয়ারপারসন কে হবেন, তা তিনি জানাননি। খাড়গে বলেন, জোট পরিচালনায় ১১ জনের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। মুম্বাই বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে।
কংগ্রেস সভাপতি বলেন, সবাই যাতে একসঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে পারে, সে জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেই কর্মসূচি তৈরিতে আলাদা কমিটি গঠন করা হতে পারে। জোটের মূল কার্যালয় হবে দিল্লিতে।
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘ইউপিএ’ জোটের অবসান ঘটল। ২০০৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’-এর (এনডিএ) মোকাবিলায় কংগ্রেস সেই জোট গড়ে তুলে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল।
বিরোধীদের জোটবদ্ধতার মোকাবিলায় শাসক দল বিজেপিও তাদের তৈরি ২৫ বছরের পুরোনো এনডিএ জোট পুনরুজ্জীবিত করল। আজ মঙ্গলবার দিল্লিতে অশোক হোটেলে দেশের ৩৮টি দলের নেতাদের বৈঠক ডাকা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন। বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ওদের একটাই মন্ত্র। পরিবার ও পরিবারের জন্য। দেশ সেখানে অনুচ্চারিত। ওটা দুর্নীতি ও পরিবারবাদের জোট।’
জোট গঠনের চেষ্টায় বিজেপিবিরোধী নেতারা প্রথম মিলিত হয়েছিলেন বিহারের রাজধানী পাটনায়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আয়োজিত সেই বৈঠকে ১৬ দলের নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক আলোচনার পর ঠিক হয়, পরবর্তী বৈঠক বসবে কংগ্রেসশাসিত কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দিন ধরে ২৬ দলের নেতাদের আলোচনার পর নতুন জোটের নাম চূড়ান্ত হয়। কংগ্রেস প্রথম থেকেই চেয়েছিল নতুন নামে যেন ‘ইন্ডিয়ান’ শব্দটি থাকে। বামপন্থীরা আবার ‘অ্যালায়েন্স’ শব্দের বদলে ‘ফ্রন্ট’ শব্দের পক্ষপাতী ছিলেন।

শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরের প্রস্তাব ছিল ‘অপজিশন’ শব্দটি যেন না থাকে। শেষ পর্যন্ত বৈঠক শেষে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে জোটের নতুন নাম ঘোষণা করেন। বলেন, ‘বিজেপি দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করতে চায়। সে জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি, ভিজিল্যান্স কমিশনের মতো স্বশাসিত সংস্থাগুলো ব্যবহার করছে। এই ভয়ংকর অবস্থার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আমরা জোটবদ্ধ হয়েছি।’
বিজেপির উদ্যোগে এনডিএর বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘এত দিন ওরা জোটের কথা মুখেও আনেনি। একের পর এক শরিক জোট ছেড়েছিল। ওরা তোয়াক্কা করেনি। এখন আবার জোট বাঁধতে চাইছে। বোঝা যাচ্ছে, বিরোধীদের কতটা ভয় পাচ্ছে।’ এনডিএর শরিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব দল কারা জানি না। এ-ও জানি না, ওই দলগুলো নিবন্ধিত কি না।’

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে খাড়গের পর একে একে সব নেতাকে বক্তব্য পেশ করতে বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলেন, আজ থেকেই শুরু হলো লড়াই। বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুংকার, ‘এনডিএ কি ইন্ডিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে? সবাই মিলে আমরা দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাব।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘দেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ৯ বছর ধরে মোদি সব দিক থেকে চূড়ান্ত ব্যর্থ। দেশের সবকিছু তিনি বিক্রি করে দিচ্ছেন। গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন ঘৃণা। এই দেশকে আমরাই বাঁচাব।’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, লড়াই বিজেপির সঙ্গে বিরোধীদের নয়। লড়াই বিজেপির আদর্শের বিরুদ্ধে চিরন্তন ভারতীয় আদর্শের। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.