ভাঙন আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ, বিলিন হচ্ছে ঘর-বাড়ি!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: গত কয়েকবদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢল থেকে নেমে আসা পানি তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পরছে শতাধিক পরিবার। বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ছে। সদর উপজেলার রাজপুরের দক্ষিণ পাড়ায় ৩৫ টি ঘর বিলিন হয়েছে।
এসব এলাকার ফসলিজমি ,বসতভিটা বিলীন হতে শুরু করেছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। অনেকেই নিজেদের বসতভিটা হারিয়ে ঠাই নিচ্ছেন অন্যের জমিতে। ভাঙ্গন কবলিতদের অভিযোগ ভাঙ্গনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগষ্ট) দুপুরে জেলার হাতিবান্ধায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৭০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে সোমবার (১৪ আগষ্ট) তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.৩৫ যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরার বাসিন্দা আব্দুল গফুর জানান, পৈতৃক ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এ পর্যন্ত ৪ বার বাড়ি সড়িয়ে অন্যের জমিতে কয়েকবছর থাকার পর অনেক কষ্টে অর্থ জমিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন তিনি। এবছর সেই বাড়িটিও নদী ভাঙ্গনের শিকার হলো।
অশ্রুশিক্ত কন্ঠে কৃষক আব্দুল গফুর জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে দেখে যাচ্ছে। ভাঙ্গনতো চলছেই। বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে ঠেকাতেই আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। গফুর বলেন,আমার বাড়ী পুরোটা ভেঙে গেলে আরো অনেক বাড়ীঘর, মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদী ভাঙ্গনের কবলে পরবে।
একই এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম রহিমা বেগম জানান, আজকেই তিনটা বাড়ী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন লোকজন। পাশেই থাকা শফিকুল ইসলাম নামের একজন জানান, রোজগারের জন্য ঢাকায় ছিলাম, বাড়ীর লোকজন ফোনে জানালো জমি, বাড়ী ও গাছপালা সব নদী ভাঙ্গনে শিকার হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারীর বাসিন্দা খয়বর বিটিসি নিউজকে জানান, হঠাৎ বন্যা আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পানি কমে যাওয়ায় আবার নদী ভাঙ্গন আতংকে রয়েছি। পার্শ্ববর্তী বাহাদুর পাড়ার বাসিন্দা মোফা মিয়া জানান, গতবছর নদী ভাঙ্গনে বাড়ি সড়িয়ে নিয়ছি।এবারেও নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হয়ত আবার বাড়ি সড়িয়ে নিতে হবে। একই রকম মন্তব্য করেন বাগডোরা, চন্ডিমারী, রাজপুরসহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন। সকলের দাবি বন্যার সময় ত্রাণ বা অর্থ সহায়তা না দিয়ে নদীতে স্থায়ী বাধ নির্মাণ অথবা নদী খননের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের।

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মন্ডল বাদল বিটিসি নিউজকে বলেন, নদীর গভীরতা কম থাকায় অল্প পানিতেই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যার পর নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। তাছাড়া পানি কমলে তো ভাঙ্গন চলেই। এবারেও বাগডোরায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বিটিসি নিউজকে জানান, বিভিন্ন যায়গাতে ঘরবাড়ীঘর ভাঙ্গনের তথ্য পাচ্ছি, তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে। যাছাই শেষে তাদের নগদ অর্থ এবং ঢেউ টিন বিতরণ করা হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বিটিসি নিউজকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা বাগডোরা, চন্ডিমারী, মহিষখোচা, সহ বেশকিছু পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.