ভয়াবহ হয়ে উঠছে রাফা শহরের পরিস্থিতি

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাফা শহরের পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। তারা খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) তাদের সর্বশেষ দৈনিক আপডেটে জানিয়েছে, রাফা শহরের লোকজন খাবারের জন্য এমন করুণ পরিস্থিতিতে রয়েছে যে, তারা খাবারের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছে না। তারা ত্রাণবাহী ট্রাক দেখলে সেগুলো থামাচ্ছে যেন সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে খাবার নিয়ে খেতে পারে।
ওসিএইচএ বলছে, দক্ষিণ গাজার ওই জনবহুল শহরে মানবিক সংকট নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থার মধ্যেই খাদ্য সংকটের কারণে লোকজন মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং তাদের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জনাকীর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার লোকজনের জরুরি ভিত্তিতে খাবার প্রয়োজন। তারা ক্ষুধার্ত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় আরও ত্রাণবাহী ট্রাকে খাবার সরবরাহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানকার লোকজনের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
শুধুমাত্র রাফাহ এবং কেরেম শালোম (কারেম আবু সালেম) ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সহায়তা গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারছে। ফলে মধ্য এবং উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহ করতে হলে প্রথমে রাফাহ দিয়েই প্রবেশ করতে হয়।
এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আশদোদ বন্দর দিয়ে গাজা উপত্যকার জন্য পাঠানো আটার একটি বড় চালান আটকে দিয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। সে সময় হাসপাতালের কর্মী ও রোগীদের গোলাগুলির মুখে জোর করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
ইসরায়েল বলছে, তারা খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট ও সীমিত অভিযান পরিচালনা করেছে। তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, হামাস সেখানে জিম্মিদেরকে রেখেছে। তবে এই অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে নাকচ করে দিয়েছে হামাস। ওই হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, সেখানকার অবস্থা খুবই বিপজ্জনক।
গাজায় চালু রয়েছে এমন হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালের মধ্যে নাসের হাসপাতাল একটি। এটি গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালানোর পর গাজায় প্রতিরক্ষা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এদিকে ইসরায়েলে বোমাসহ অন্যান্য সামরিক অস্ত্র পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানের মধ্যেই তেল আবিবে অস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলে সামরিক অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সামরিক সহায়তায় থাকবে এমকে-৮২ বোমা ও কেএমইউ-৫৭২ জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক যুদ্ধাস¿।
এই বোমাগুলোর আনুমানিক আর্থিক মূল্য উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এর আনুমানিক মূল্য দাঁড়াবে মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অস্ত্র সহায়তা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার প্রস্তাবনো আভ্যন্তরীণভাবে খতিয়ে দেখছে বাইডেন প্রশাসন। তবে কংগ্রেস কমিটির নেতাদেরকে এ বিষয়ে প্রস্তাবনার পর কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে। কারণ কংগ্রেস কমিটি প্রস্তাবনার অনুমোদন দিবে।
ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা বিভাগ, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে দুইবার অস্ত্র বিক্রি করেছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু সেই সময় কংগ্রেস কমিটিকে এড়িয়ে গেছেন বাইডেন।
ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। অভিযোগ করে বলা হচ্ছে, গাজায় সাধারণ মানুষ হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.