ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পরাজয়ের দিন গুনছেন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উদারপন্থীরা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে এমন একজন মানুষ হিসাবে স্মরণ করতে পারেন, যার কাছে টোরি পার্টিকে পুনর্বাসনের কাজটি ব্যাপক ছিল, যেখানে এর সাংসদ এবং সদস্যরা ব্রেক্সিট যুদ্ধের দীর্ঘ সঙ্কটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
কিন্তু সত্যটি হলো, সুনাক এমন একটি দল ও দেশ পরিচালনা করেছেন, যেটির অস্তিত্ব শুধুমাত্র তার নিজের মস্তিষ্কের মধ্যেই ছিল। তিনি একজন রাজনীতিবিদ যিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে সমস্ত ভুল পাঠ নিয়েছেন এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভবত ডাউনিং স্ট্রিটে তার ক্ষমতার শেষ দিনগুলি অতিবাহিত করছেন।
ঋষি সুনাকের বাবার আমলে, যেসব ভারতীয় দেশ ছেড়ে পূর্ব আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক হিসাবে বিবেচনা করতেন। কিন্তু তবুও ব্রিটিশরা আফ্রিকানদের সভ্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
এই প্রেক্ষাপট থেকেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত পূর্ব আফ্রিকানরা আফ্রিকার স্বাধীনতার পর অনুকূল অভিবাসন ব্যবস্থার অধীনে ব্রিটেনে এসেছিল। ব্রিটেনে আগত আফ্রিকান-ভারতীয়দের সন্তানরা এখন সুয়েলা ব্রেভারম্যান, প্রীতি প্যাটেল এবং সুনাক, যারা ব্রিটিশ সংসদে টোরিদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সাফল্যের পথে এরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছেন বলে বিবরণ দিয়ে থাকেন, সেগুলো ব্রিটেনে বৈষম্যের পরিমাপক এবং প্রকৃতি নির্ধারণে তাদের একচেটিয়া অধিকার দিয়েছে।
তবে তা কখনোই দেশটির কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার নজির বহন করে না, যা কারোর উন্নতিতে বাধা দিতে পারে। ফলে, ঋষি সুনাকের শূন্য থেকে উঠে আসা একটি অনুপ্রেরণামূলক রাজনৈতিক আখ্যান তখনই সত্যিকারের শোনায়, যখন তিনি তাকে এতদূর আসতে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার বিশ্বাস সম্পর্কে কথা বলেন যে তিনি দেশটি সম্পর্কে মৌলিক কিছু উপস্থাপন করেন।সুনাকের পটভূমি অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ছিল না।
তবুও ব্রিটেনের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি তাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তার স্বপ্ন লালন করেছে বলে মনে হচ্ছে। তারপরেও, তিনি বছরের পর বছর ধরে টোরি নীতি এবং আদর্শের প্রতি তার চোখ-কান বন্ধ করে রেখেছেন, যা রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক প্রান্তিককরণ এবং জাতি বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে, যেটি ‘রিফর্ম’ এর মতো কট্টরপন্থী দলগুলিকে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং তাকে শক্তভাবে আঘাত করেছে।
সুনাক তার নিজস্ব অর্থনৈতিক মতাদর্শের দ্বারা চালিত হয়ে রুয়ান্ডা প্রকল্পের মতো অতি ন্যাক্কারজনক অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি এমন ঠা-ামাথার নিপীড়নমূলক উদ্যমের সাথে তা করেছেন, যার তার এযাবৎকালের সাফল্যের উপায়গুলিকে ন্যায্যতা দেয়। তিনি তার শীর্ষে যাওয়ার পথে অন্যদের মাথায় যে বিপর্যয় নেমে আসে, তা বিবেচনা করেন না। তবে, শেষ পর্যন্ত এটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে সুনাকের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুনাক এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি এমন একটি রাজনৈতিক গল্পের পুনরুক্তি করেছেন, যা সর্বজনীন রাজনৈতিক সত্যের চেয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিগত কল্পকাহিনীই বেশি ছিল।
তিনি একজন বিজয়ী থেকে পরাজিত হয়েছেন তার একগুঁয়ে সীমিত কাঠামো জ্ঞানের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে। সুনাক সেই উচ্চাকাক্সক্ষী, যিনি দৃঢ়তার সাথে চূড়ান্ত ক্ষমতার দিকে দৌড়েছেন এবং শুধুমাত্র এটিই আবিষ্কার করেছেন যে, এটি একটি মরীচিকা ছিল, যার যতই কাছে এসেছেন, ততোই চিরতরে বিবর্ণ গেছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.