ব্রাসেলসের সঙ্গে সংঘাতের পথে ব্রিটেন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন সংকটের সময় ইউরোপে ঐক্য বজায় রাখার বাড়তি চাপ সত্ত্বেও ব্রিটেন এবার সরাসরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংঘাতের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
ইইউ ত্যাগ করার সময় ২০১৯ সালের ব্রেক্সিট চুক্তি মেনে নিয়ে সেই বোঝাপড়াকে বিশাল সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেও এখন সেটি অমান্য করতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার।
উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলের অংশবিশেষ পরিবর্তন করতে ব্রাসেলসের উপর চাপে কাজ না হওয়ায় ব্রিটেন একতরফাভাবে কিছু নিয়ম পরিবর্তন করতে সংসদের নিম্ন কক্ষে আইনি খসড়া পেশ করেছে। সেইসঙ্গে বিরোধ মেটাতে ইইউ আদালতের এক্তিয়ারও চ্যালেঞ্জ করছে জনসন সরকার।
বলা বাহুল্য, ইইউ ব্রিটেনের এমন একতরফা পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারশ শেফচোভিচ জানিয়েছেন, লন্ডনের এমন উদ্যোগের পর ব্রাসেলসের যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নিয়ে নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শর্ত ভঙ্গ করলে ইইউ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। ব্রিটেন থেকে আমদানির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক বসানো থেকে গোটা ব্রেক্সিট চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ব্রাসেলস।
পূর্ণ মাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধ সম্পর্কে শিল্প ও বাণিজ্য জগত দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে। ইইউ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে নাজুক শান্তি প্রক্রিয়াকে কোনো রকম হুমকির মুখে দেখতে চায় না ওয়াশিংটন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ব্রিটেনের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সে দেশ বিনা কারণে চুক্তি ভঙ্গ করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, তিনি ইইউ-র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান। তবে ব্রাসেলসকেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের কঠিন সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার সদিচ্ছা দেখা হবে। জাতীয় স্তরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁর সরকার অত্যন্ত ‘সিরিয়াস’। কয়েক মাস পর সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে খসড়াটি আইনে পরিণত হবে বলে লন্ডন আশা করছে।
উল্লেখ্য, ইইউ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবার পর থেকেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জনসন উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত বোঝাপড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন। সেই প্রদেশে আঞ্চলিক নির্বাচনের পর ‘গুড ফ্রাইডে’ চুক্তি অনুযায়ী সব পক্ষকে নিয়ে সরকার গঠনে চলমানঅচলাবস্থার পর জনসন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সরব হয়ে উঠেছেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তির স্বার্থেই আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে ‘সামান্য’ রদবদল করা প্রয়োজন বলে তিনি জোর দিচ্ছেন।
ব্রেক্সিট চুক্তি অনুযায়ী উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে শুল্ক সীমা কার্যকর রয়েছে। অন্যদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ইইউ সদস্য আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত উন্মুক্ত রয়েছে। জনসন সরকারের বিতর্কিত আইন কার্যকর হলে সেই মৌলিক বোঝাপড়া ভেঙে পড়বে। ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্য চলাচল সহজ করতে ‘গ্রিন চ্যানেল’ সৃষ্টি, কর সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন এবং ইইউ আদালতের এক্তিয়ার শেষ করতে চায় জনসনের সরকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.