বৈরী আবহাওয়া মেঘলা আকাশ আর শৈত্যপ্রবাহে সুন্দরবনের দুবলার চরের শুটকি পল্লীর জেলে ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মূখে

বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঘূর্নিঝড় বুলবুলের ক্ষত শুকিয়ে সরগরম হয়ে উঠলেও বৈরী আবহাওয়া মেঘলা আকাশ আর শৈত্যপ্রবাহ যেন সুন্দরবনের দুবলার চরের শুটকি জেলে পল্লীর জেলে ও ব্যবসায়ীদের ফের লোকসানের মূখে ফেলেছে । দিনে মিলছেনা সূর্যের দেখা ফলে মাছ শুকাতে পারছে না জেলেরা ।

তারপরেও সকাল থেকে রাত অবধি মাছ ধরা, বাছাই, গ্রেডিং ও প্রক্রিয়াকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর অনুন্নত প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থায় মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভালো মানের শুঁটকি উৎপাদন করা গেলে রফতানি আয় কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতায় ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুবলার চরসহ সাতটি চরে গত চার দশক ধরে গড়ে উঠেছে দুবলা শুঁটকি পল্লী। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস চালু থাকে শুঁটকি তৈরীর এই মওসুম।

এরই মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা,শরণখোলা, মোংলা,রামপাল,পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ১৬ হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী দুবলা শুঁটকি-পল্লীতে সাগর থেকে ধরা মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুবলা শুঁটকি পল্লী গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। তাই সনাতন পদ্ধতিতে ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে এখানে মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারি সহায়তায় শুঁটকিপল্লীর আধুনিকায়ন হলে গুণগত মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন ও রফতানি কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করে ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির হিসেবে, সুন্দরবনের দুবলা শুঁটকিপল্লীতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। যা দেশে মোট উৎপাদিত শুঁটকির ৮০ শতাংশ।

জেলে ও মহাজন সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মওসুমকে ঘিরে এ বছর প্রায় ১৬ হাজার জেলে ও মৎস্য আহরণকারী জড়ো হয়েছেন সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর ও নারকেলবাড়িয়া চরে।

পূর্ব সুন্দরবনের ভেতরে ছয়টি মৎস্য আহরণ, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলে পল্লীর সৃস্টি।
এখানে জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ডিপো ঘর ও মাচা তৈরি করেন। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ ধরে তা বাছাই করে শুঁটকি তৈরি করেন। পরে সেই শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজারজাত করা হয়।

দুবলার চরের আলোরকোলোর সুন্দরবন মৎস্য জীবি সমিতির সভাপতি মো. মোহতাসিম বেপারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান,ঘূর্নিঝড় বুলবলে অনেক ক্ষয়- ক্ষতি হয়েছে শুটকি পল্লীর ।এখন প্রচন্ড শীত আকাশ মেঘলা তার পরে সাগরেও মাছ কম । যে মাছ ধরা পড়ছে তা আবার শুকাতে পারছি না ।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা টহলফাড়ীর ইনচার্জ অশিত কুমার রায় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন , জেলেদের জন্য চরে ৭১৭টি জেলে ঘর এবং মহাজনের জন্য ৩৫টি ডিপো ঘর ও ৮৫০ টি নৌকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২৮ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ১২ ফিট প্রস্থ নির্ধারণ করে ঘরের মাপও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এর থেকে বড় ঘর তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মৎস্যজীবীদের বৃহৎ সংগঠন ও দুবলা ফিশারম্যান’ গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সাগরে মাছ খুবই কম,তার পরে আবার বৈরী আবহাওয়া জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

দুবলার চরে স্থায়ী সমস্য জেলেদের খাবার পানি সংকট, স্বাস্থ্য সেবা ও আশ্রায় কেন্দ্রের । ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসলে জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য লোকালয় ফিরে আসতে বলা হয় সরকারের পক্ষথেকে । কিন্তু তখন সেটা সম্ভব হয় না, তাই সরকারের প্রতি দাবী খাবার পানির জন্য পুকুর খনন ও ১৫ থেকে ১৬ হাজার জেলে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সে জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রায় তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুবলার চরে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ দিয়ে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না।

গত শুঁটকি মওসুমেও সুন্দরবনের গাছ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে চলতি মওসুমের শুরুতেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.