বৃষ্টিতে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রামবাসী, জলজটে জনজীবন ভোগান্তি চরমে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চার দিন ধরে অঝোরে ধারায় ঝরছে আষাঢ়ের বৃষ্টি চট্টগ্রামে। তবে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে মিষ্টি রোদের দেখা পেলেও হঠাৎ কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে গোটা শহর। যদিও গতকাল মঙ্গলবার (০ জুলাই) দিনভর বৃষ্টি ঝরবে বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস।
গতকাল মঙ্গলবার (০ জুলাই) সকাল ছয়টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ও বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে আগামী শুক্রবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত টানা বৃষ্টির আভাস জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা চার দিনের বৃষ্টির কারণে নগরের কোথাও যানবাহনের সংখ্যা কম আবার কোথাও লেগেছে যানজট। নিচু এলাকার কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলজটেরও। যদিও বৃষ্টি থামার পর জমে থাকা পানি সরে যাচ্ছে। তবে টানা বৃষ্টির সময় সিএনজিসহ গণপরিবহনের ঘাটতি এবং যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবি মানুষদের। আর তাতেই বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন নগরবাসী।
এছাড়াও চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনেও বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার শুরুতে বৃষ্টিতে খুব একটা ধকল না পোহালেও পরীক্ষা শেষে ঝরো বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে চট্টগ্রামে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে।
বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, কমার্স কলেজসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। গেল শনিবার থেকে কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী লোকজনকে।
চাকতাইয়ের চাল ব্যাবসায়ী হাজী মো. রাসেল বলেন, বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা না হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আসতে পারছেন না। বেচাকেনা অত্যন্ত কম। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও নগরীর পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, বাকলিয়া,কালামিয়া বাজার সড়কে হাঁটাচলায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। এ সড়কের পাশে খালে চলছে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ। এ কারণে বৃষ্টিতে সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর খান বলেন, বাকলিয়া কালামিয়া বাজার সড়কে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে এ সড়ক হাঁটাচলার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বারবার আমরা ¯হানীয়রা বার বার তাগাদা দিলেও তারা কোন কর্নপাত করছেন না।
অপরদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ২ জুলাই সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টি ঝরলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মো. মোতাহার আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.