বিড়ম্বনার অন্য নাম হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:  শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষের লাইনটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে সরকারি-বেসরকারি কোন অনুদান দেয়ার দৃশ্য এটি। কিন্তু না, এটা কোন অনুদান প্রদানের দৃশ্য না। এটি হবিগঞ্জের ২০ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের স্বাস্থ্্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আউটডোরের একটি দৃশ্য।

দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। এটি কোন একদিনের ঘটনা নয়, দিনের পর দিন এ অবস্থা চলে আসছে ২৫০ শয্যা এই হাসপাতালে।

বেলা ১২টার থেকে আইটডোরে চিকিৎসা প্রদান করার কথা থাকলেও চিকিৎসক আসেন ২টার দিকে। আবার ঘন্টাখানেক চিকিৎসা দেয়ার পর বেলা ৩টা বাজলেই সময় শেষ বলে ফিরিয়ে দেয়া হয় রোগীদের। এতে বিপাকে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা। স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিতে এসে দূর্ভোগের শিকার হতে হয় তাদেরকে। সাথে সময় ও গাড়ী ভাড়াও বিপল যায় অসহায় এসব রোগীদের।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- হঠাৎ করে এখানে দায়িত্বরত ডাক্তারদের অন্যত্র বদলি করে দেয়া হয়েছে। ফলে ডাক্তার সংঙ্কটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে।

আজ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সকাল থেকে অপেক্ষা করা অনেক রোগী বেলা ১টা পর্যন্ত ডাক্তার না আসায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আর ডাক্তার আসার অপেক্ষায় লাইনে দাড়িয়ে আছেন অনেকেই। বেলা ২টার পর আউটডোরে প্রবেশ করেন দীলিপ কুমার সরকার নামে এক চিকিৎসক। তিনি নিজেকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সের জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট বলে দাবি করেন। আর সদর আধুনিক হাসপাতাল নাকি তাকে করজ করে এনেছে।

তিনি বলেন- ‘আমি মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সের জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছি। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক সংঙ্কট থাকায় এখানে আমাকে কয়েকদিনের জন্য আনা হয়েছে।’

বেলা ২টার দিকে আসার বিষয়ে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন- ‘আমি সকালে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু ইমার্জেন্সি বিভাগে প্রচন্দ- ভিড় থাকায় সেখানে ছিলাম। সেখান থেকে এখন আমি এখানে এসেছি।’

চিকিৎসা নিতে আসার বানিয়াচং উপজেলা রোগী আল আমীন বিটিসি নিউজকে বলেন- ‘আমি সকাল থেকে বসে আছি। কিন্তু বেলা ২টার দিকে ডাক্তার আসছেন। হাসপাতালের কোন বিভাগেই কোন ডাক্তার খোঁজে পাওয়া যায়নি। সব ডাক্তাররা নিজেদের ব্যাক্তিগত চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।’

তিনি বলেন- ‘আমিতো বেহায়ার মতো বসে আছি। কিন্তু অনেকেই অনেকক্ষণ সময় বসে থেকে ডাক্তার না আসায় ফিরে গেছেন।’

সদর উপজেলার রামপুর থেকে আসা রোগী রমাছা. আমেনা বেগম বিটিসি নিউজকে বলেন- ‘কোন দিন আইয়া (এসে) ঠিক সময় ডাক্তার পাই না। বইয়া (বসে) থাইকা থাইকা ওষধ নেওয়ন লাগে। আর বেশি কুছতা (কিছু) কইলে (বললে) বেটকি (ধমক) মারে।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতিন্দ্র চন্দ্র দেব’র কাছে বিষয়টি জানতে ফোন করলে বিটিসি নিউজের সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সাথে সাথে ‘গাড়িতে আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর আর রিসিভ করেননি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.