বিবাদ নয়, মাহাথিরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান আনোয়ার ইব্রাহিম

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে কোনো বিবাদে না জড়ানোর কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
গেল বছরের ২৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
সম্প্রতি দুই দিনের সফরে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার ফোকাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো পালন করা। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার একজন প্রবীণ রাষ্ট্রনায়ক। সে আমার বিরুদ্ধে কী বলল, না বলল এসব বিবাদে না জড়িয়ে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।’
আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, দেশের জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে। নির্বাচনের আগে জনগণ আমাকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছে এখন সেদিকে মনোনিবেশ করছি। আমাদের ঐক্যের সরকার দেশের ভবিষ্যৎ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করে দ্রুত নতুন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে কাজ করছে। আমরা সুশাসনের অবস্থান এবং দুর্নীতি প্রত্যাখ্যান করে একটি জোট গঠনে সফল হয়েছি এবং এই নীতিতে একমত হয়েছি।’
প্রায় ২৫ বছর আগে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। সেই সময়টা কেটেছে নানা চড়াই–উতরাই আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, কাঁধে চেপেছে সমকামিতা ও দুর্নীতির মতো সব অভিযোগ।
আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে। তার হাত ধরেই মালয়েশিয়ায় ইসলাম ইয়ুথ মুভমেন্ট (এবিআইএম) নামের ছাত্রসংগঠনের গোড়াপত্তন। ১৯৮২ সালে তিনি অনেককে অবাক করে দিয়ে মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালায়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন।
দূরদর্শী, উচ্চাভিলাষী ও সংস্কারমনা রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম ১৯৮৩ সালে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, ১৯৮৪ সালে কৃষিমন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালে শিক্ষামন্ত্রী হন। শিক্ষামন্ত্রীর পদ তার মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বার খুলে দেয়। শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল কারিকুলাম’ প্রণয়ন করেন। মালয়েশিয়ার জাতীয় ভাষার নাম ‘বাহাসা মালয়েশিয়া’ থেকে ‘বাহাসা মেলায়ু’-এ পরিবর্তন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো সাধারণ অধিবেশনের ২৫তম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী হন। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
ধারণা করা হতো, মাহাথিরের পর মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তার জায়গা নেবেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে বাদ সাধে ১৯৯৭ সালে এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট। এমন পরিস্থিতিতে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শেষে ১৯৯৮ সালে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় আনোয়ার ইব্রাহিমকে।
মাহাথির মোহাম্মদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন আনোয়ার ইবরাহিমকে। অভিযোগ রয়েছে, আনোয়ারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন মাহাথির। তবে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছেন নিজেই। সাধারণ নির্বাচনে হেরে হারিয়েছেন জামানত, একটি আসনও পায়নি তার দল।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পাঁচদিন পর অর্থাৎ গত ২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টায় ইস্তানা নেগারা রাজপ্রাসাদে রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ আনোয়ার ইব্রাহিমকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন এবং একই সঙ্গে শপথ পাঠ করান। এর মধ্য দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিমের দীর্ঘ তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান হয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.