বিপুল টাকা রাজস্ব ফাঁকি বিশাল ফুড এর বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনের অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্প (সুপুরা) এলাকায় অবস্থিত মেসার্স বিশাল ফুড  এ- ই-াস্ট্রিজের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। 
অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে ঊৎপাদিত এসব খাদ্যপণ্য বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে ছোট-বড় দোকান ও কনফেকশনারীতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে বিপুল অংকের টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি পণ্য উৎপাদনের লাইসেন্স রয়েছে। তবে তারও মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে। কিন্তু লাইসেন্স নবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত আবেদনই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরেও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ- টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স বিশাল ফুড এ- ই-াস্ট্রিজ নামের এই প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি মোড়কজাত পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন (সনদ) ছিল।
পণ্যগুলো হলো- লাচ্চা সেমাই, পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর ও প্লেইন কেক। তবে প্রায় সাড়ে তিন মাস গত ৩০ জুন তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু লাইসেন্স নবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত আবেদনই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
গত ৩ অক্টোবর বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক (পদার্থ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা প্রকৌশলী তৈয়ব আলী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই পাঁচটি পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট বিএসটিআই’র তৎকালীন রাজশাহী বিভাগীয় অফিস প্রধান ও উপ-পরিচালক (মেট) রেজাউল করিম সরকার স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা গেছে, মেসার্স বিশাল ফুড এ- ই-াস্ট্রিজের ৫০০ গ্রাম ওজনের লাচ্চা সেমাই মোড়কজাতকরণের জন্য সনদ প্রদান করা হয়। এই সনদের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই থেকে চলতি বছরের (২০২২) ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধ থাকবে এবং বিদ্যমান নিয়মে নবায়ন করা যাবে।
পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, সনদপত্রের সকল শর্তাবলী মেনে চলতে হবে। আর যে কোনো শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে সনদপত্র বাতিল করা যাবে। একইভাবে অপর চারটি পণ্যের পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর ও প্লেইন কেকের বিষয়েও একই ধরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এই চারটি পণ্যের সনদের মেয়াদও গত ৩০ জুন উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে পৃথক পৃথক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত খাদ্যপণ্য সরবরাহের অর্ডার কপিতে দেখা গেছে, সেখানে মোট ৫৯টি পণ্যের তালিকা রয়েছে। অথচ পাঁচটি পণ্যের সনদের মোয়াউত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ছাড়াও বাকি ৫৪টি পণ্য উৎপাদনের কোনো বৈধতা বা সনদ নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার সাধন বাবু ও ম্যানেজার রনি কোনও ধরণের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে পাঁচটি পণ্যের সনদের মোয়াউত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ছাড়াও আরো কয়েকটি পণ্য উৎপাদন (অনুমোদনহীন) করে বাজারজাত করা হয় বলে জানিয়েছেন সহকারী ম্যানেজার সাধন বাবু।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে মেসার্স বিশাল ফুড এ- ই-াস্ট্রিজের সত্বাধিকারী মাহবুব আলমের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসটিআই’র রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মেট্রোলজী) আব্দুল হান্নান বলেন, মেসার্স বিশাল ফুড এ- ই-াস্ট্রিজের পাঁচটি পণ্য উৎপাদনের লাইসেন্স (সনদ) রয়েছে। তবে তারও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে গত ৩০ জুন। কিন্তু লাইসেন্স নবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত আবেদনই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পণ্য মোড়কজাতের জন্য লাইসেন্স (সনদ) নবায়ন না করা বা দীর্ঘদিনেও তা নবায়নের জন্য আবেদন না করা বেআইনী। সনদ নবায়ন না করে পণ্য উৎপাদন বা মোড়কজাত করা অবৈধ বলেও জানান তিনি।
সরকারকে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এবং অনুমোদন না নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আরো খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে তা বাজারজাত করতে পারছে কিভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেসী অভিযান পরিচালনা করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই’র শিথীলতা প্রদর্শন ও কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসের বিষয়টি সঠিক নয়।
তবে জানতে চাইলে বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক জহুরুল হক ও সহকারী পরিচালক দেবব্রত বিশ্বাস তথ্য প্রদানে গড়িমসি করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.