বিডা’র কার্যক্রমে রাজশাহীতে ইতিবাচক সাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজশাহীতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বিডা’র “উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প”। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে বিনিয়োগ বিকাশের লক্ষে দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ফ্রি প্রশিক্ষণ ও বিনা জামানতে বিনিয়োগ সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। আর তাতে সাড়া দিয়েছে হাজার হাজার তরুণ তরুণী ও যুবক প্রজন্ম।

“তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ রবিবার (২৫শে আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিডা’র বুথগুলোতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির কার্যক্রম চালু হয়।

২০২০ সালের মধ্যে সারাদেশে ২৪ হাজার নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা। এর আগে গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁ-এ বিডা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সরবরাহে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বিনিয়োগে বিকাশের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিভিন্ন বহুমূখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগ বিকাশের জন্য প্রয়োজন উদ্যোক্তা। এ লক্ষ্যে, ২২ আগস্ট ২০১৯তারিখে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, রাজশাহীতে প্রস্তুতিমূলক আয়োজনকৃত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৫-৩১ আগস্ট পর্যন্ত উক্ত কার্যালয় রাজশাহীতে ১০টি বুথ স্থাপন এবং প্রতিটি বুথে ২জন করে উদ্যোক্তা হবার ফরম বিতরণ ও সংগ্রহের কাজ করবে।

রাজশাহীতে বিডা’র ১০টি বুথগুলোর স্থান- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠানের ভিতরে), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠানের ভিতরে), রাজশাহী কলেজ (প্রতিষ্ঠানের ভিতরে), নিউ মার্কেট (শিরোইল পুলিশ ফাড়ির পাশে), নিউ ডিগ্রী গভ: কলেজ (সিএন্ডবি মোড়ে), রাজশাহী পলিটেকনিক (গেটের সামনে), শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা (টিকিট কাউন্টারের সামনে), রাজশাহী রেল স্টেশন (এর সামনে), আলুপট্টি (গ্রামীন ফোন সেন্টারের সামনে), নগর ভবন (এর সামনে)।

তদপ্রেক্ষিতে, বিডার দি ম্যানেজার প্রকল্পের জন্য এক  স্মারক লিপির মাধ্যমে ১০টি বুথে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ রাখাসহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে সকাল থেকেই বিডা’র বুথগুলোতে নারী পুরুষভেদে ভীড় জমিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষ। বিনা জামানতে ঋণ এবং ফ্রি ট্রেনিং পাওয়ার কথা শুনে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে বিডা’র উদ্যোক্তা ফরম পূরণে ভিড় জমাচ্ছে উদ্যোক্তারা। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই তরুণ ও যুবক বয়সের ছেলে মেয়ে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ২৭ বছর বয়সী মোঃ রাশেদুল ইসলাম নামের এক উদ্যোক্তা বিটিসি নিউজকে জানান, স্বল্প পুঁজিতে দু’তিন টা করে গরু কিনে লালন পালন করি। ভালো পরিচর্যার পর গরুর স্বাস্থ্য ভালো হলে ৬ মাস বা বছর পরে তা হাটে বেঁচে দেয়। সেক্ষেত্রে, সরকারের এই উদ্যোক্তা তৈরীর প্রকল্প থেকে যদি কোনোভাবে লোন পায় তাহলে আশা করি আমি একজন বড় খামারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব। সেই সাথে আমার খামারের মাধ্যমে দুধ ও মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে জন্যও অবদান রাখতে পারবো বলে আশা করছি।

এদিকে, নগরীর শিরোইল নিবাসী মিনহাজ আহমেদ জানান ভিন্ন কথা। তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক থেকে সবেমাত্র ডিপ্লোমা শেষ করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করছেন। তার ইচ্ছে, একটি আইসিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করার। সেখানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং কোর্সসহ বাস্তবভিত্তিক কোর্স গ্রাফিক্স, থ্রিডি এনিমেশন, হার্ডওয়ার, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সফটওয়ার তৈরীর মত বিভিন্ন কোর্স করাবেন। যাতে আইসিটি ট্রেনিং করে দেশে বেকার কিছুটা হলেও লাঘব হয়।

বিডা’র উদ্যোক্তা তৈরী ‘দি ম্যানেজার’ প্রকল্পের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট মোঃ ওহেদুজ্জামান ও ইতি খাতুন জানান, আমরা আজকেই প্রথম সকাল থেকে আমাদের উদ্যোক্তা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি। প্রথমদিকে বুথে ভীড় কম থাকলেও পরে ব্যাপক ভীড় জমে উদ্যোক্তাদের। শত শত তরুণ তরুনী ও যুবকদের ফরম আমরা প্রথম দিনেই সংগ্রহ করতে পেরেছি। এই ক্যাম্পেইনের আরো ৬ দিন বাকি আছে। তাই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর এই প্রকল্প ব্যাপক সাড়া ফেলবে এবং তৈরী হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এই ছোট দেশে প্রতি বছরই পাশ করে বের হচ্ছে লক্ষ লক্ষ বেকার।সে তুলনায় সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে চাকরী দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সরকারী চাকুরীর শূণ্যপদ খুব সীমিত। যার কারণে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বেকারত্ব দূরীকরনে উদ্যোক্তা সৃষ্টির এই দারুন প্রকল্পটি হাতে নেন।

তিনি আরো জানান, আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিভা, যারা সামান্য কিছু সাপোর্টের জন্য হয়ত তাদের উদ্যোগ ও কার্যক্রমটি পরিনতিতে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে না। এধরনের প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের খোঁজে বিডার এই প্রকল্প। আপাতত, বিডা’র উদ্যোক্তা সংগ্রহের কাজ বিভাগীয় শহরে হচ্ছে। তবে এটি পর্যায়ক্রমে জেলা শহর, জেলা থেকে উপজেলা সব জায়গায় পৌঁছে যাবে। যাতে দেশে বিদ্যমান লুকায়িত মেধার সন্ধান করে আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি। আমি আশা করছি সরকারের এই উদ্যোগটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে সর্বজন বিদিত হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.