বিএমডিএ-তে তার চুরি: তদন্তের নামে চোর ছাড়ার অভিযোগ পুলিশের ওপর

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) স্টোরে তামার তারের চারটি রিল চুরির সময় হাতে-নাতে কর্তব্যরত আনসারদের কাছে ধরা পড়েন এরশাদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিএমডিএ’র সদর দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক একজন কর্মচারী। বিষয়টি বিএমডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানার পর থানায় পুলিশে খবর দিয়ে হাতে-নাতে আটক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য বারং বার বলার পরও তদন্তের নামে ছেড়ে দেয় তদন্তের আশা পুলিশ কর্মকর্তা আকরামুজ্জামানের। এরপর থেকেই চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত এরশাদুল পলাতক।
পুলিশের এমন কর্মকান্ডে নাখোশ বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নস্তরের কর্মচারীরা। তাদের ভাষ্য, হাতে-নাতে চুরির মাল ধরার পরও পুলিশ কিভাবে চোরকে ছেড়ে দেন? কোনো ধরনের অনুমতি এবং চাহিদাপত্র ছাড়াই স্টোরের পেছন দিক দিয়ে মালগুলো চুরি করা হচ্ছিল। এ সময়ের সিসিটিভি ফুটেজও এই ঘটনার খাঁটি প্রমাণ। কিন্তু তারপরও পুলিশ এমন কান্ডটি ঘটালো কেনো? বিএমডিএ জুড়ে এমন প্রশ্ন অনেকের।
তবে এই চুরির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টিতে সন্দেহের তীর গিয়ে বিধেছে স্টোর কিপার মো. রেজাউল করিম ও তার অধীনস্ত দারওয়ান (অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ) মো. শাহিনুর রহমান কাজলের ওপর। ওই সময় তারা স্টোরে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই স্টোরে থেকে চুরি হয় তার। কিন্তু তাদের দাবি, তারা কিছুই জানতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্যান্য মালামালের সাথে ডিপ টিউওয়েলের কাজে ব্যবহারযোগ্য চার রিল তামার তারের স্যাপল ছিল স্টোরে। সাধারণত অফিস অর্ডার এবং চাহিদা ছাড়া কোনো প্রকারের মালামাল স্টোর থেকে বের হওয়ার নিয়ম নেই। এই নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এগুলো গোপনে স্টোরের পেছন দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এরশাদুল। ঘটনাটি আনসার সদস্যরা টের পেয়ে তাকে মালামাল সহ আটক করে।
ওই সময় বিএমডিএ’র স্টোরে দায়িত্বরত আনসার রুবেল শরিফ বিটিসি নিউজকে জানান, সাধারণত অফিস অর্ডার হওয়ার পর চাহিদাকৃত মালের ওপর একটি টোকেন প্রদান করা হয়। সেই টোকেন আনসারদের কাছে জমা দিলে তারা তখন মাল ছেড়ে দেন। কিন্তু এমন কোন কাগজ এবং টোকেন না নিয়েই পেছন থেকে তামার তারের রিল নিয়ে যাওয়ার সময় এরশাদুলকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে উর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজে মালগুলো নেওয়ার সময় স্টোর কিপার রেজাউল ইসলামকে ভেতরে দেখা গেছে এবং গেট খোলা অবস্থায় ছিল।
বিএমডিএ সূত্র বলছে, নিয়ম অনুসারে একজন স্টোরকিপার যখন অফিস ত্যাগ করবেন, তখন তার উর্ধ্বতন দু’জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে স্টোরে তালা দিয়ে সিলগালা করে বের হবেন। এটি প্রতিদিনের রুটিন। আর যতক্ষণ তিনি অফিসে থাকবেন; ততক্ষণ স্টোরের যাবতীয় দায়িত্ব তার। তার উপস্থিতিতে একটি নাট-বল্টুর হেরফের হলে; তার  ঘাড়েই দায়িত্ব বর্তায়। অথচ, তার উপস্থিতিতেই এমন কান্ডটি ঘটেছে। তবে এমন ঘটনায় তার কিংবা তার অধীনস্ত দারোয়ানের কোনো প্রকারের সংযোগ নাই বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি। চুরির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি স্টোরকিপার রেজাউল করিমের।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই নগরীর রাজপাড়া থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন বিএমডিএ’র রাজশাহী রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা থানায় কল করে পুলিশ ডাকি এবং অভিযুক্ত কর্মচারী এরশাদুলকে গ্রেফতার করতে বলি। কারণ, সে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবেই চার রিল তার সরিয়ে নিচ্ছিলো। প্রতি রিলে প্রায় ১১কেজি করে তামার তার থাকে। চার রিল তামার এই তারের বাজার মূল্য আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। এই চুরির চাক্ষুস প্রমাণসহ সে ধরা পড়ে। কিন্তু পুলিশ তা না করে তদন্তের টালবাহানা করেন এবং তাকে ছেড়ে দেন। সেই কর্মচারী গত সোমবার অফিসে আসেনি। এখন সে পলাতক। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চুরির বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসতো। কিন্তু, এমন টা হয়নি।
চোর ও চুরির ঘটনায় দাপ্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, একটি নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলী আছেন। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দানের পর চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গ্রেফতার না করে চোর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা সরকারি জায়গা থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি গেছে। নিয়ম মেনে উর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়ে নিজে বাদী হয়ে এজহারও দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশের এক কর্মকর্তা চোরকে না ধরে তদন্তের নামে ছেড়ে দিয়েছেন। এটা দুঃখজনক। বিষয়টি বিএমডিএ’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। তারা হয়তোবা পুলিশের উর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাবেন।
চোর না ধরার বিষয়ে এসআই আকরামুজ্জামান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি সেখানে তদন্ত করতে গেছি। গভীর তদন্ত না করে কাউকে ধরা যায় না। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ যদি এটা বলে থাকলে তারা মিথ্যা বলছে। কারণ, চোর সেখানে উপস্থিত ছিল না’।
এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল আলমকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল করেও না পাওয়ায় তার মন্তব্য মেলেনি।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) নগর মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। উভয়পক্ষের কাছে পুরো ঘটনাটি জেনে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবো। তবে কেউ যদি কর্তব্যে অবহেলা করে থাকে, তবে তারও এ ব্যাপারে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই‘।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.