বালুমহাল ইজারা বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি: পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও ইজারা বাতিলের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: বারবার ভাঙনের শিকার হয়ে কয়েক বছর আগে পদ্মা নদীর বাঁধের পাড়ে বসতবাড়ি করেছি। কিন্তু সাড়ে ছয়’শ কোটি টাকার বাঁধ থাকার পরেও এখন আবারও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছি। গত কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বসতবাড়ি, ফসলী জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। এমন অবস্থায় আবারও নতুন করে বালুমহল ইজারা দিলে সেখানে বালুর বদলে এবার রক্ত পাওয়া যাবে। জীবন দিয়ে হলেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করব। আমাদের লাশ গুনে শেষ করা যাবে না’।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্ব ও টিকে থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী বাসিন্দা আব্দুল আলিম (২৫)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে ভাঙন ঠেকাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও নতুন ইজারা আহŸান বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে তিন ইউনিয়নের জনসাধারণ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আলাতুলী, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান ফয়সার বলেন, ‘গত ০৫ আগস্ট পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল একটি কুচক্রী মহল। এমন অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে, জেলা প্রশাসক ৪ মাসের জন্য বালু উত্তোলনে বাধা না দেয়ার অনুরোধ জানান।
এমনকি সেসময় তিনি জানান, আগামীতে ভাঙনকবলিত পদ্মা নদী এলাকায় আর বালুমহল ইজারা দেয়া হবে না। কিন্তু আবারও একই জায়গায় বালুমহলের ইাজারা আহŸান করা হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল দরপত্র খোলার দিন নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইজারা কার্যক্রম বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কারণ নদীর পাড় ঘেঁষে এভাবে বালু উত্তোলন চলমান থাকলে আমাদের ভিটেমাটি সবকিছু হারিয়ে যাবে নদীগর্ভে।
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইজারা বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে তিন ইউনিয়নের জনসাধারণকে নিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করা হবে। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা লাশ পড়লে সম্পূর্ণ দায়ভার জেলা প্রশাসককে নিতে হবে।
’মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বারবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমরা তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা নদী পাড়ে বসবাস করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে প্রায় সাড়ে ছয়শত কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করেছেন। বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আমাদের এলাকা ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহাজাহান ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বাঁধ ও তীরবর্তী মানুষ হুমকির মধ্যে পড়েছে।’
তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে নদীর বাঁধ ভেঙে বেশ কিছু বসতবাড়ী, স্কুল, মাদ্রাসাসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তিনটি ইউনিয়নবাসী অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নিজেদের অস্তিত্ব বিলিনের মুখে। এনিয়ে বারবার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো নতুনভাবে আবারও বালুমহল ইজারা দেয়া হচ্ছে। তা চলমান থাকলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। মানববন্ধন শেষে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নতুন ইজারা আহŸান বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান ফয়সাল আব্দুল আলিম, মো. কাওসার, আব্দুল জলিল, মাসুদ রানা প্রমুখ।
বালু মহাল ইজারা কার্যক্রম বিষয়ে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সদর উপজেলার আলাতুলী, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নবাসির আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২/৩/২০২৫ইং তারিখের ৪৪১ ও সংশোধিত সংশোধন ২৪ দিন ২৪/৩/২০২৫ ইং তারিখের ৫১২ নং স্মারকে জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলাধীন রানীনগর বালুমহাল (মৌজা- রানীনগর/১৬৯, খতিয়ান,০১, দাগ নং-৬৪০১ জমির পরিমানণ-২২.০০ একর ও মৌজা-দুর্লভপুর /১৭০,খতিয়ান নং-০১,দাগ নং-৪১৬, জমির পরিমাণ-১৩.১১একর) এর ১৪৩২ বঙ্গাব্দের ইজারা প্রদান কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জনসার্থে বন্ধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে অপর তিনটি বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, বালুমহলের ইজারা বন্ধের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পাওয়া গেছে। জনসাধারণের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করা হবে না। যাচাই-বাছাই করে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.