বালুতে ঢেকে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ  লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে এবার লোকালয়ে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১৫/২০ দিন হয়ে গেল।
মানুষজনও ঘরে ফিরেছে। ভেঙে যাওয়া বসত-বাড়িও মেরামত করেছে তারা। কিন্তু তাদের সব চেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে আবাদি জমিগুলোতে বালু পড়ে।
জমিতে আমন ধানের চারাগুলো বালুতে ঢেকে গেছে। ক্ষতিগুলো পুঞ্জিভূত হয়ে তাদের হৃদয়ে আঁচড় কাটছে সারাক্ষণ। লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী বন্যা কবলিত এলাকা গুলো ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এবার বন্যাটি স্থায়ী হওয়ার কারণে আবাদি জমিতে পানি বেশি দিন জমে ছিলো। তাই জমির জমাট বাধা বালুর স্তর সরে যায়নি। এতে জমিতে ধানের চারাগুলো বালুতে ঢেকে গেছে।
তিস্তা ও ধরলার বুকে বালুমিশ্রিত পলি জমতে জমতে নদীর বুক প্রায় সমতল হয়ে গেছে। ফলে নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে তা উপচে গিয়ে তীরবর্তী এলাকার লোকালয়ে জমিতে পানি চলে যায়। পানির সাথে বিপুল পরিমাণ বালুও চলে আসে।
অনেক কৃষকই এ সমস্যায় নিমজ্জিত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তবে সরকারি ভাবে আবাদি জমিতে জমাট বাধা বালুরস্তর সরিয়ে দিলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের মনছুর আলী বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করেছে। এতে তার খরচও হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার টাকা।
কিন্তু বন্যায় তিস্তা নদীর বালুতে তার ৩ বিঘা জমির ধান চারা ঢেকে গেছে।
তিনি জানান, বন্যার পানির সাথে বিপুল পরিমাণে বালু এসে আবাদি জমিতে জমাট বেঁধেছে। পানি নেমে গেছে কিন্তু, নামেনি বালুগুলো। বালুতে ঢেকে যাওয়া আবাদি জমিতে আর ফসল হবে না।
তবে বালু সরাতে পারলে জমি আবাদযোগ্য হবে। এ কাজ আদৌ সম্ভব না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে কোদাল দিয়ে বালু সরাতে।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের সির্ন্দুনা গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, ২০১৭ সালে তার ৫ বিঘা জমিতে বালুরস্তর জমে ছিলো। আজো সেগুলো আবাদযোগ্য হয়নি। এ বছরও বন্যার পানিতে বয়ে আসা বালুতে ঢেকে গেছে আরো দুই বিঘা আবাদি জমি। আবাদি জমির উপর বন্যার পানি স্থায়ী হলেই এ সমস্যাটা হয়। একই ভাবে তাদের স্বপ্ন ভাঙার গল্প বলেন ওই এলাকার কৃষক জাকির হোসেন, মমতাজ উদ্দিনসহ অনেকেই।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী সির্ন্দুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল আমিন বিটিসি নিউজকে বলেন, বন্যার সময় আবাদি জমির উপর বালুরস্তর জমা আর পরবর্তীতে জমি অনাবাদী হওয়া একটি বড় সমস্যা।
আমার ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে ৪/৫ শতাধিক কৃষকের শত শত বিঘা জমি অনাবাদী হয়েছে আর এগুলো এখনো অনাবাদী রয়ে গেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম বিটিসি নিউজকে বলেন, নিয়মিত তিস্তা ও ধরলা নদী খনন ছাড়া এ সমস্যা থেকেই যাবে। বিশেষ করে তিস্তা নদী খনন ও তীর সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং চলতি অর্থ বছরে তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধুভুষণ রায় বিটিসি নিউজকে জানান, বন্যার পানির সাথে নদীর বালু এসে কী পরিমাণ আবাদি জমিকে অনাবাদী করেছে এর সঠিক হিসাব নেই।
তবে এ বছরের বন্যা স্থায়ী হওয়ায় নদীর তীরবর্তী বিপুল পরিমাণে আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.