বাবা আমাদের পরিবারের জন্য ৭ হাজার ২৫০ টাকা রেখে গিয়েছিলেন : মেয়র লিটন

 

:লীগ প্রতিবেদকজাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতিচারণ করে তাঁর সুযোগ্য সন্তান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বাবা আমার মাকে জেলখানায় দুইবার বলেছিলেন, ‘‘পলির মা, আমি তো একটি মেয়েরও বিয়ে দিতে পারলাম না। ছেলে দুটো ইন্ডিয়াতে আছে, পড়াশোনা করছে, ওদের নিয়ে ভাবছি না। কিন্তু এমটি মেয়েরও বিয়ে দিতে পারলাম না। এই মেয়েগুলোর বিয়ের ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে। আমার অনেক বন্ধু আছে, শুভাকাঙ্খী আছে, বিয়ে আটকাবে না।’’ যে মানুষটির হাত দিয়ে কোটি কোটি নগদ টাকা, গুড়া দুধ, কম্বল-কত কিছু ত্রাণ সামগ্রী ১৯৭২ সালে বিতরণ হলো, সেই মানুষটি বলছে আমাদের মেয়েদের বিয়ে তোমাকে দিতে হবে। অর্থাৎ নিজের কাছে সঞ্চয় নেই, তিনি রাখেননি কখনো। শুধু তিনি নন, এমন ছিল জাতীয় চার নেতার প্রত্যেকের চরিত্র।’

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ স্মৃতিচারণ করেন। বিশ^বিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধের চেতনা ও মূলবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন।

সভায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে আমার পিতার শহীদের ১৯৮০ সালে আমি ইন্ডিয়া থেকে দেশে আসি। বাড়িতে আসার পর কৌতুহলবসত বাবার কাগজপত্র খুঁজছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে মাত্র দুইটি ব্যাংকের চেক বই পেলাম। চেক বইয়ে মাত্র কয়েকটি করে পাতা আছে। ব্যাংক দুইটির শাখাতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, দুইটি ব্যাংকে মোট ৭ হাজার ২৫০টা আছে। শহীদ কামারুজ্জামান তাঁর পরিবারের জন্য রেখে গেছেন ৭ হাজার ২৫০ টাকা। তিনি সে সময় সাতশ কোটি টাকাও রেখে যেতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। এটি শুধু আমাদের পরিবারের না, জাতীয় চার নেতার প্রত্যেক পরিবারের এমন অবস্থা।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই সেই বাংলাদেশ যে বাংলাদেশ গড়তে, আমাদের বাবার শুধু জীবন চলে গেছে তাই না, আমাদের জীবনেরও একটা বড় সময় চলে গেল। আমি যদি বলি ১৯৭৫ থেকে ৯৬ এই ২১ বছর আমাকে ফিরে দাও, প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনা যদি বলেন আমাকে ওই ২১ বছর ফিরে দাও, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যদি এক কোটি মানুষ বলে আমাকে আমার ওই সময় ফিরেয়ে দাও। ফিরে দিতে পারবে কেউ? সেই সময় আর পাওয়া যাবে না। তবে সুুখের বিষয় অন্তত দেখে যাচ্ছি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়ন দিয়ে যাচ্ছেন। আমি আমার ক্ষুদ্র পরিসরে উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি উন্নত রাজশাহী গড়তে চাই।

খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, এই রাজশাহীর মানুষের জন্য আমার পিতা কত স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমিও স্বপ্ন দেখেছি। আমার ৫ বছর আমি পিছিয়ে গেলাম, পারলাম না রাজশাহীর জন্যে কিছু করতে। কী অপরাধ ছিল জানি না, কেন আমাকে ২০১৩ সালে মানুষ ভোট দেননি জানি না। গত ৫ বছরে সারাদেশ উন্নত হলো, আমি রাজশাহীকে উন্নত করতে পারলাম না। ভুল বুঝে ৫ বছর মানুষ আমাকে সুযোগ দিলো না। সুযোগ পেলে এতোদিন রাজশাহী আরো কত উন্নত হতো। তবে এবার আবার সুযোগ দিয়েছে মানুষ। সবার সহযোগিতা নিয়ে সুন্দর উন্নত রাজশাহী গড়তে চাই।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রক্ষায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।

আলোচকের বক্তব্যে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শকে মুছে ফেলতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে একজন ব্যক্তি মানুষকে হত্যা করা নয়। আদর্শকে হত্যা করার জন্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যাতে কেউ এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের নিরাপদ জায়গায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক প্রফেসর এম মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি চৌধুরি মো. জাকারিয়া। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর লায়লা

আরজুমান বানু, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর প্রফেসর লুৎফর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।#( প্রেস বিজ্ঞপ্তি )#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.