বাড়তি উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে লেবানন থেকে ভারী গোলাবর্ষণ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈরুতে হামাসের উপপ্রধানকে হত্যার পর গাজা যুদ্ধের উত্তেজনা এখন চরমে। এরই মধ্যে শনিবার লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলেকে লক্ষ্য করে ভারী গোলবর্ষণ করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনারা এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী সেল’ আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এদিকে গাজা উত্তেজনা কমাতে কাজ করছে ইউরোপী-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরা।
উত্তর ইসরায়েল জুড়ে রকেট সাইরেন বাজানোর কিছুক্ষণ পরে সামরিক বাহিনী বলেছিল, ‘লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলের মেরন এলাকার দিকে প্রায় ৪০টি রকেট শনাক্ত করা হয়েছে।’ তাৎক্ষণিক হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা এই সপ্তাহের শুরুতে হামাসের ডেপুটি চিফকে হত্যার ‘প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে ৬২টি রকেট দিয়ে শনিবার ভোরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলি পর্যবেক্ষণ ফাঁড়িতে আঘাত করেছে।
মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে হামাসের ইরান-সমর্থিত লেবাননের মিত্র হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে হামাসের উপ-নেতা সালেহ আল-আরোরি একটি ড্রোন দ্বারা নিহত হওয়ার পর থেকে উত্তেজনা বেড়েছে।
পশ্চিমা কূটনীতি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিনিয়র কূটনীতিক জোসেপ বোরেল শুক্রবার লেবানন, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং লোহিত সাগরের শিপিং লেনগুলোতে তিন মাস পুরনো গাজা যুদ্ধের উত্তেজনা বন্ধ করতে একটি নতুন কূটনৈতিক চাপ শুরু করেছেন।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ প্রায়শই সীমান্ত জুড়ে গোলাগুলি করে, পশ্চিম তীরে মানুষ মরছে ও ইরান সমর্থিত হুথিরা যতক্ষণ ইসরায়েল গাজায় হামলা না থামাবে ততক্ষণ লোহিত সাগরের শিপিং লেনগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, গাজা থেকে হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আক্রমণ করার পর ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৪০ জন জিম্মি হয়। এরপর থেকেই গাজায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজা শাসনকারী ইসলামি আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে চালানো ইসরায়েলি অভিযানে ২২ হাজার ৬০০ লোককে হত্যা করেছে এবং ২৩ লাখ মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
ব্লিঙ্কেন ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকরা এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সফর সত্ত্বেও সংঘাতের কোনো প্রশমন ঘটেনি।
ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা শনিবার জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসের পূর্বে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের বেইত রিমা গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৭ বছর বয়সী একজন নিহত হয়েছে এবং আরও চারজন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের মতে, তারা ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ৮ হাজার যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। আর এ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের ১৭৫ সেনা নিহত হয়েছে।
শুক্রবার তুরস্কে থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী সফরের সময় ব্লিঙ্কেন পশ্চিম তীরে যাবেন। মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েল, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিসরেও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হামাসকে সমর্থন দেয় ইরান। ইরান-সমর্থিত অন্যান্য যোদ্ধরা ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা করছে এবং লেবানন থেকে ইসরায়েলে আক্রমণ চালাচ্ছে। হামাসের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই প্রতিক্রিয়া বলে জানিয়েছে তারা।
গাজার আতঙ্কিত বাসিন্দারা, যাদের বেশিরভাগ জনসংখ্যা বোমা হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তারা খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানী স্বল্পতার কারণে বিধ্বংসী মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.