বাঘায় প্রাণের উৎসব বৈশাখে নানা প্রস্তুতি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঘা , বছর ঘুরে আবারো দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ মানেই পুরাতন বছরের জীর্ণতা আর ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে নতুন উদ্যোমে আরেকটি নতুন বছরের সূচনা। ঐক্য আর সম্প্রীতির সেতুবন্ধনের অঙ্গীকার নিয়ে ক’দিন পরেই সারাদেশে উদযাপন হতে যাচ্ছে এ উৎসবটি। সে উপলক্ষে জেলার বাঘায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও রয়েছে নানা কর্মসূচি। এখানে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও একুশে পদক পাওয়া বইপ্রেমী সাদা মনের মানুষ পলান সরকার।
ওইদিন অসম্প্রদায়িক চেতনায় সমগ্র বাঙালি উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, আবেগ আর উল্লাসে উৎসবমুখর পরিবেশে মেতে উঠবে বৈশাখ বরণে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো..’ গানে বৈশাখের ভোরে রাস্তায় চলবে মঙ্গল শোভা যাত্রা। এটি এখন কেবল রমনার বটমুলে সিমাবদ্ধ নয়, এ উৎসব এখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঘায় সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা সদরের অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বটমুল চত্বরে। এখানে সকালে ডাল দিয়ে সজনে ডাটাসহ পান্তা ইলিশের পর দিনভর চলবে বাঙালির সংস্কৃতি পল্লিগীতি, বাউল, লালন, ভাটিয়ালি, হাছন, জারি-সারি ও রবীন্দ্র-নজরুলসহ লাটি, হাডুডু, বদন, বানর ও সাপ খেলা।
সংস্কৃতিক অঙ্গন উপজেলা শিশু একাডেমির শিল্পীরা এ উৎসবকে ঘিরে নাটক, কবিতা, সংগীত ও নৃত্যের জোর মহড়া শুরু করেছে গত কয়েকদিন থেকে। নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোট তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে নানা বৈচিত্রের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ইতোমধ্যে উপজেলা চত্বরে তৈরী করা হয়েছে বিশাল আকারে’র একটি ফড়িং ও দোয়েল পাখি। সেই সাথে তৈরী হচ্ছে একটি মঞ্চ। এটি এমন ভাবে তৈরী করা হচ্ছে যা দেখলে মনে হবে একটি খড়ের ঘর। বাস্তব অর্থে এটি মঞ্চ। এই মঞ্চের পার্শ্বে থাকবে এতিহ্যবাহী সিঁকা-পাতিল ও বাউই পাখির বাসাসহ আবহমান বাংলার হারিয়ে যাওয়া শিল্প ঢেকি-জাতা।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ছোট বেলায় ফড়িং ধরতে খুব মজা পেতাম। কিন্তু এখন যান্ত্রিক যুকে ফড়র্ি চোখে পড়েনা। তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে এগুলোকে তুলে আনতে হবে। এ প্রজম্মের শিশুরা ক্রীকেট আর ফুটবল ভাল বুঝে। অথচ তারা জানেনা গোল্লা ছুট, বদন, কানামাছি কি? তাই বাংলা বর্ষ বরণে ব্যাতিক্রম ধর্মী কিছু করার চেষ্ঠা করছি। অনুরুপ কথা বলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) যোবায়ের হোসেন। তিনি বৈশাখের মঞ্চে গান গাইবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
এদিকে বাঙালির সার্বজনীন এ উৎসবটি পালনের জন্য মার্কেট গুলোয় লেগেছে বৈশাখের ছোঁয়া। উপজেলার বিপণী বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখ উপলক্ষে তাদের বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাঁজিয়েছে। অনেক দোকানি আবার বৈশাখ উপলক্ষে তাদের পণ্যে ছাড় দিয়েছে। বলা যেতে পারে গত ১০ দিন ধরে দোকানগুলোতে বেশ ভিড় জমতে শুরু করেছে।
এই দিনটির জন্য নিজেকে সতন্ত্র ও নতুন ভাবে উপস্থাপন করতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে তরুণ-তরুণীরা এমনকি শিশুসহ ছেলে-বুড়ো সবাই। ঈদ ও পূজোর মতোই নতুন কাপড় কেনার ধুম পড়েছে দোকান গুলিতে। বাংলার ঐতিহ্য কুলা, ঢেঁকি, মাথল, ডুগি, তবলা, একতারা অংকন করা লালপেড়ে সাদাশাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবী ও গামছা কিনতে প্রধান প্রধান মার্কেটগুলিতে যেন ঢল নেমেছে। এদিক থেকে মাঝ বয়সিরাও পিছিয়ে নেই বৈশাখী উৎসবের আয়োজন থেকে। তারাও কিনছেন সাধ্যমত পোশাক।


অন্যদিকে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে এবার নতুন পোশাক পরার প্রত্যায় ব্যাক্ত করেছেন একুশে পদক পাওয়া বই প্রেমী ও সাদা মনের মানুষ বাঘার আলোচিত পলান সরকার। তিনি বলেন, তাদের আমলে আজকের ন্যায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন হতো না। জমিদারের (পূর্ণী) খাজনা আদায় আর মহাজনের হালখাতা বৈশাখের বার্তা আনতো। সেকালে হালখাতা আর পিঠা খাওয়ার মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করতো সবাই। বর্তমান সময়ে নতুন শাড়ি কাপড় পরে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গান গেয়ে যে নববর্ষ উদযাপন সেটি ওই আমলেই ছিল না। হালখাতার মাধ্যমে মানুষ বুঝতো নতুন বছর এসেছে। অথচ কালের বিবর্তনে তা পাল্টে সাংস্কৃতি মনায় বৈশাখের উৎসব ছড়িয়ে পড়ছে এখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
এ বৈশাখে আপনার কোন প্রোগাম আছে কি না জানতে চাইলে পলান সরকার বলেন, না এবার আমার কোন প্রোগাম নাই। শরীরটাও বেশি ভালনা। তবে নতুন পাঞ্জাবী পরবো। পাশাপাশি এ দিনটি সম্পর্কে লোকজনকে আরো বেশিবেশি করে জানানোর চেষ্টা করবো। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.