বাগমারায় প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার টাকা কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগ

প্রতীকী ছবি
বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রশিক্ষণের ভাতার পরিবর্তে নিম্ন মানের সেলাই মেশিন দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাতার বিনিময়ে টাকা না দিয়ে নিম্ন মানের সেলাই মেশিন ক্রয়-বিতরণ করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রশিক্ষণার্থীরা দাবি করেছেন। শুধু নিম্ন মানের সেলাই মেশিন নয়, একজন সরকারি কর্মকর্তার লেখা ২৩০টাকা মূল্যের একটি বইও কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। এনিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নীতিমালা লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করে বলেছেন, নারীদের সুবিধার জন্য প্রশিক্ষণের ভাতার পুরো টাকা না দিয়ে তাঁদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মহিলা বিষয়ক দপ্তরের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারীদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের (আইজিএ) আওতায় বিনামূল্যে তিনমাস মেয়াদে টেইলরিং এবং ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে মাসে ২০দিন করে তিনমাসে মোট ৬০দিন এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য প্রতিটি ব্যাচে ২৫ জন টেইলরিং এবং ২৫ জন ব্লক-বাটিক বিষয়ে মোট ৫০ জনকে নির্বাচিত করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উপজেলায় গত ৩১ আগস্ট শেষ ব্যাচের ৫০জনের প্রশিক্ষণ সমাপনি হয়েছে।
সরকারি নীতিমালায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর প্রশিক্ষানার্থী নারীদের হাতে প্রতিদিনের হাজিরা হিসাবে ২০০ টাকার করে ৬০ দিনে মোট ১২ হাজার টাকার প্রশিক্ষণের ভাতার চেক দেওয়ার কথা বলা আছে। তবে উপজেলার প্রশিক্ষনার্থী নারীদের হাতে ভাতার পুরো টাকা দেওয়া হয়নি। তাঁদের প্রত্যেককে ১২ হাজার টাকার পরিবর্তে নগদ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, নিন্মমানের একটি বাটারফ্লাই কোম্পানির সেলাই মেশিন ও একজন সরকারি কর্মকর্তার লেখা ২৩০ টাকা দামের একটি বই দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভাতার টাকায় ভাগ বসানোর কৌশল হিসাবে নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। গত ৩১ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষিত নারীদের মধ্যে এসব বিতরণ করেন।
প্রশিক্ষণ নেওয়া ১০-১২জন নারী নিজেদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নকল ও নিম্ন মানের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাজ করতে পারছেন না ওই সেলাই মেশিন দিয়ে। সেলাই মেশিনে বাটারফ্লাই কোম্পানির স্টিকার থাকলেও তা আসল নয়। এছাড়াও ছাপানো নকল বারকোডের স্টিকার লাগানো হয়েছে। এসব মেশিনের দাম সর্বোাচ্চ চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারের মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে ও মেশিনের ধরণ দেখিয়ে মূল্য বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও তাঁদের ওপর বাড়তি ২৩০ টাকা দামের একটি করে বই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবশেষ গত ৩১ আগস্ট প্রশিক্ষিত ৫০জন নারীদের দেওয়া সেলাই মেশিনগুলো নিম্ন মানের। সেলাই মেশিন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো অকেজ হয়ে পড়লে কমপক্ষে ১০জন নারী সেগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে এসেছিলেন। তাঁদের স্থানীয় ওই মেশিন বিক্রেতার কাছে পাঠানো হয়। পরে নারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা নিয়ে মেশিনের কিছু অংশ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
ভবানীগঞ্জ বাজারের ওই মেশিন সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন এর সত্যতা শিকার করেছেন। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর তাঁর কাছ মেশিনগুলো কিনেছেন। সেগুলো আসল কী না সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। তবে এই মেশিন ক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রশিক্ষক (ব্লক-বাটিক) রবিউল ইসলাম গত মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেস্বর) দুপুরে নিজ দপ্তরে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে কাছে স্বীকার করেন আসল মেশিনের দাম বেশি। তবে তাঁদের সরবরাহ করা সেলাই মেশিন আসল বলে দাবি করেছেন।
এই বিষয়ে প্রকল্পের উপজেলার সদস্যসচিব মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার মাক্বামাম মাহমুদা নীতিমালা লঙ্ঘন করে টাকার পরিবর্তে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে এটা করেছেন। এছাড়া নকল মেশিন কেনা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.