বাগমারায় কৃষি জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে কৃষকদের সংবাদ সম্মেলন


বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় অপরিকল্পিত ভাবে তিন ফসলি জমিতে জোর পূর্বক বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে কৃষকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কৃষকদের দাবি আশেপাশে পরিত্যাক্ত বা অকৃষি জমি থাকলেও বিশেষ একটি মহলের ইন্ধনে তাঁদের আবাদী তিন ফসলের জমিতে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্রের নামে জমি দখল নিতে পায়তারা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের সূর্য্যপাড়া, পিদ্দপাড়া, গোয়ালপাড়া, অনন্তপাড়া শিবদেবপাড়াসহ এলাকার ৬ গ্রামের কৃষকরা সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিদ্দপাড়া গ্রামের কৃষক দেওয়ান জোনাব আলী। এতে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়ার মৌজার বিলে তিন ফসলি জমিতে নাটোর পল্লী বিদ্যুতের নামে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবৈধ ভাবে জমির মালিকদের ব্যতি রেখে একটি মহল উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ থেকে প্রায় ৪ কিঃ মিটার দুরত্বে বিলের মধ্যে তিন ফসলি জমি বিদ্যুৎ গ্রিড নির্মাণে অধিগ্রহণে জমি মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি আশেপাশে অনেক জমি খাশ বা অকৃষি জমি রয়েছে সেটা বাদ রেখে কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে পল্লী বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র তৈরিতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তারা দাবি করে বলেন, বিলের ধারের সূর্য্যপাড়া, পিদ্দপাড়া, অনন্তপাড়া, গোয়ালপাড়াসহ ৬টি গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে তাদের ভরনপোষন দেয়। বিগত দিনে বিলের মধ্যে অবৈধ পুকুর খননে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে যতটুকু ভালো আবাদী জমি রয়েছে তাতে তারা ধান কেটে রবি মওসুমের ফসল আলুচাষ, পেঁয়াজ, গমচাষ করে। রবি মওসুমের পর পুনরায় বোর ধানচাষ করেন। এছাড়া ওই জমিতে মাঝ খানে সবজিচাষে অতিরিক্ত আয় পায় তাঁরা। কৃষকরা একই জমিতে ৩/৪ ধরনের ফসল করে জীবিকা নির্বাহ করে চলে। এতে করে ওই ফসলি জমি অধিগ্রহণ হলে তাদের অর্ধহারে অনাহারে জীবনযাপন করতে হবে বলে তার শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁদের দাবি ফসলি জমি বাদ রেখে ওই এলাকায় যাত্রাগাছি, উত্তর একডালাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে খাশ কিংবা পরিতাক্ত জমি আছে সেখানে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। পিদ্দপাড়া গ্রামের মুকবুল হোসেন, আশেক আলী, রমজান আলী জানান, এই জমি তাদের একমাত্র সম্বল তাদের মুল্যবান ফসলি জমিতে ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণে সম্প্রতি অধিগ্রহণের নোটিশ পেয়ে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। এর পর থেকে ধাফে ধাপে ওই কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ভাবে জমি দখল নিতে চেষ্টা করছে।
স্থানীয় মেম্বর মোয়াজ্জেম হোসেন, পিদ্দপাড়া কৃষক জাহিদ, অনন্তপাড়া গ্রামের মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রী মরিয়ম, গোয়ালপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম, আব্দুল মজিদসহ অনেকে জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে তাঁরা জানতে পারেন গোয়ালপাড়া মৌজায় ঢাকার পাওয়ার গ্রিড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনে বাস্তবায়ন করছে। জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ওই এলাকায় প্রায় ১৫ বিঘা জমি নির্বাচিত করেছে। এ প্রেক্ষিতে তাঁর নোটিশও জারি করেছে।
নোটিশ পেয়ে স্থানীয় শতাধিক কৃষক এলাকাবাসীর পক্ষে ফসলী জমিতে এধরনের কাজ বিরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষকের স্বাক্ষরিত আবেদন জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। এর পর আরো দু’ দফা জমি অধিগ্রহণের নোটিশে তারা বিব্রত ও ভীতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পরে পরিকল্পিত প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ফসলি জমি রক্ষা করতে ওই সকল জমির মালিকদের পক্ষে কাজ বন্ধের জন্য রাজশাহীতে বাগমারা সহকারী জজ আদালতে কোর্টে আবেদন করা হয়। যার মামলা নং৬৪/১৮ অঃ গ্রঃ।
মামলা চলাকালীন পরও সম্প্রতি জমি দখল নিতে গোয়ালপাড়া মৌজায় ঢাকার পাওয়ার গ্রিড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনে বাস্তবায়ন বিভিন্ন উপকরণ রাখতে শুরু করে। জোর পূর্বক ওই সংস্থার প্রতিরোধে স্থানীয়রা তাদের উপকরণ গুলো সরিয়ে দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কৃষকরা তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হলে তারা কঠিন ক্ষতিগ্রস্ত হেেবন। তাই তারা জমি অধিগ্রহণে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য কৃষকরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.