বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে লোডিংয়ের টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে লোডিংয়ের টাকা নিয়েও ব্যবসায়ীদের পণ্য লোড করে না দেওয়ায় লোডিংয়ের টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা। পরে তারা লোডিংয়ের টাকা না আদায় না হওয়া পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। আমদানি রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শ্রমিকরা একত্র হয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা লোডিংয়ের টাকা আদায়ে বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে এটিআই লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্দরের লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। গত ১৪ মে থেকে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের অধীনে লোড আনলোডিং বাবদ ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যের টন প্রতি ১০৪ টাকা করে চার্জ চালু করে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। লোড আনলোডিংয়ের টাকা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কেবল আনলোড করে দিচ্ছেন। লোডিংয়ের টাকা নিয়েও বাংলাদেশি ট্রাকে লোড করে দিচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের নিজের গাটের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে লোড করিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের লাভের বদলে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে লোডিং না করেও লোডিংয়ের জন্য আদায় করা প্রায় কোটি টাকা ফেরত দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। এ সময় বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মামুন সোবহান গত ১৪ মে থেকে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত লোডিংয়ের টাকা নিয়েও ব্যবসায়ীদের কোনো পণ্যই লোড করে দেওয়া হয়নি বলে লিখিত স্বীকৃতি দেন এবং ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এ বিষয়ে সমঝোতার আশ্বস্ত করেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের লোডিংয়ের টাকা ফেরত না দেওয়ায় তারা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি হাতে নেয়।
এদিকে ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে সকালেই বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মামুন সোবহান সটকে পড়েন। এদিকে বন্দর এলাকায় যে কোনো ধরণের অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমান, জেলা আমদানি রপ্তানিকারক এসোয়িশেনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম, সিনিয়র সহ-সভাপতি তফিজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু তোয়াবুর রহমান, ব্যবসায়ী নেতা মোজাফ্ফর হোসেন, আব্দুল লতিফ তারিন, মোকলেছুর রহমান, হারুন উর রশিদ সেলিম। এ ছাড়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শ্রমিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
আমদানিকারক হারুনুর রশিদ বাবু জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে পণ্য লোড করে দেওয়ার নামে টাকা নিয়েও কোনো পণ্যই লোড করে দেয়নি। লোড আনলোডিং চার্জ চালু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত আমাদের থেকে প্রায় কোটি টাকারও বেশি তারা লোডিং চার্জ আদায় করেছে। এখন পুরো টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে তারা।
আমদানিকারক মোজাফ্ফর হোসেন জানান, লোডিং না করেও এতোদিন নেওয়া লোডিং চার্জ আমাদেরকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে লোড আনলোড চার্জ নিয়ে লোড আনলোড করে দেওয়ার নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো পণ্য আমদানি করবো না।
এদিকে বন্দরে সকল প্রকার আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে এই বন্দর থেকে। অপরদিকে ঈদের পরে ভুটান থেকে পাথর নিয়ে আসা ২৮ জন চালক বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ী-কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বে তারা ভারত ও বাংলাদেশে ১৮ দিন যাবত অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় তারা খাবার সমস্যাসহ নানা দুর্ভোগে পড়েছেন। কেউ কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন।
ভুটান থেকে পাথর নিয়ে আসা ট্রাক চালক মাসুম আনসারী জানান, দীঘ ১৮ দিন ধরে ভারত ও বাংলাদেশে পড়ে আছি। খাবার টাকা নেই। এক কাপড়ে আছি। অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এখনো বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছিল।
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মামুন সোবহানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।#
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.