বাংলাদেশ সামরিক বহরে যুক্ত হচ্ছে তুর্কি ড্রোন

বিশেষ প্রতিনিধি: সামরিক অস্ত্র বহন এবং হামলায় সক্ষম বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোন কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে তুরস্কের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বায়কার টেকনোলজি কোম্পানির সঙ্গে এটি কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর-আইএসপিআর।
আইএসপিআর বলছে, বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোন কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। চুক্তির আওতায় কী রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনার পর সম্পূর্ণ চুক্তি সম্পন্ন করে বাংলাদেশে এই ড্রোন আনা হবে। তবে কবে নাগাদ আনা হবে, দাম কত পড়বে এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি আইএসপিআর।
জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের বায়কার টেকনোলজি কোম্পানি বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এটি সবার বিশেষ নজরে এসেছে। টিবি-২ ব্যবহার করে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ, অস্ত্রের গুদাম ও কমান্ড সেন্টারে সফলভাবে হামলা চালায় ইউক্রেন।
কী আছে বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোনে: বায়কারটেকের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, এটি একটি মাঝারি উচ্চতার আকাশযান (ড্রোন), যা বুদ্ধিমত্তা, নজরদারি রিকনেসান্স এবং সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম। এটি ৪শ’ ঘণ্টার ওপরে অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। টেক অফ, ল্যান্ডিং এবং ক্রুজ বহনে সক্ষম এমন ইউনিটগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই ড্রোনে।
২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী ও  জাতীয় পুলিশ বাহিনী সফলভাবে এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে ২৫৭টি বায়কারটেক প্ল্যাটফর্মে তুরস্ক, কাতার, ইউক্রেন এবং আজারবাইজানে এর পরিষেবা রয়েছে। তুরস্কে টিবি-২ ড্রোন পরিচালনার ইতিহাসে একটানা ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট উড্ডয়ন এবং ২৫ হাজার ৩০ ফুট উচ্চতায় ওঠার রেকর্ড করেছে।
টিবি-২ ড্রোন ৩শ’ কিলোমিটার দূর থেকে  নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা যায়। ৭০ থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল গতিতে উড়তে পারে। এই ড্রোনে চারটি লেজার স্মার্ট রকেট সংযুক্ত রয়েছে— যা নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এছাড়া এমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিআরএস-এর ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে নেভিগেশন করতে পারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক অফ  ও ল্যান্ডিং করতে পারে। ৩শ’ লিটার জ্বালানি ধারণ ক্ষমতার ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৭০০ কেজি ওজন নিয়ে উড়তে পারে।
টিবি-২ ড্রোনের বৈশিষ্ট্য; বায়কারটেক জানায়, এই  ড্রান সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন এবং রুট ট্র্যাকিং করতে পারে। সুনির্দিষ্ট অটো টেক অফ এবং ল্যান্ডিং, স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি এবং পার্কিং করতে সক্ষম। এতে ফ্লাইট মোড সমর্থন, ফল্ট টলারেন্ট এবং ৩ রিটানটেন্ট সেন্সর ফিউশন রয়েছে। রয়েছে সার্ভো অ্যাকচুয়েটর ইউনিট। এছাড়া লিথিয়াম-ভিত্তিক ব্যাটারি ইউনিট থাকছে।
সশস্ত্র ইউএভি বায়রাখতার টিবি-২ একটি অন বোর্ড লেজার ডিজাইনারের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এটি চারটি স্মার্ট যুদ্ধাস্ত্র সমন্বিত পেলোড ব্যবহার করে লক্ষ্য নির্মূলে সক্ষম। ডাইরেক্টর টিভি টু হলো এমন একটি সিস্টেম, যা নির্ভুল স্ট্রাইক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব অত্যাধুনিক সমাধান সরবরাহ করে। যা কাছাকাছি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করে। অগ্রাধিকার হিসেবে বেসামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিরক্ষা শিল্পে রিয়েল টাইম ইমেজ ট্রান্সমিশন এবং ট্রান্সমিশন সিস্টেম (বিজিএএম) প্রক্রিয়াকরণ সমাধান দেয়। বিজিএএম উচ্চ রেজুলেশন, অবিরত লাইভ সম্প্রচার, একই সময়ে একাধিক ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকে। বিজিএএম হলো ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন যা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক এবং ট্যাবলেটে নিরাপদে লাইভ সম্প্রচার দেখতে পাওয়া যায়।
সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩০ মিনিটের ছবি সংরক্ষণ করে। লাইভ ছবি পর্যবেক্ষণ করার সময় ব্যবহারকারীরা সিস্টেমে মাল্টি ট্যাগ নোট নিতে পারেন। সংরক্ষিত ট্যাগ লেবেলগুলো পরবর্তী সময়ে ভিডিওর মাধ্যমে অনুসন্ধানের সুবিধা দেয়। নিরাপত্তার কারণে সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইফ ট্রান্স লিমিটেড এবং আর্কাইভ করা চিত্রগুলোকে এক্সেস সুরক্ষা করতে অস্থায়ী পাসওয়ার্ড পুনরায় তৈরি করে।
যে কারণে টিবি-২ ড্রোনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে; বায়কারটেকের দাবি, মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে মোবাইল বেস স্থাপন করে সহজে ড্রোনটি পরিচালনা করা সম্ভব। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে এই ড্রোন উড্ডয়ন করানো যায় এবং এটি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.